অর্থনীতি

বাণিজ্য ঘাটতি দেড় লাখ কোটি টাকা

আমদানি ব্যয় বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না রফতানি আয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশের বাণিজ্য ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। মে মাস শেষে মোট বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা।

Advertisement

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপে পড়েছে। আমদনি বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা অনেক দুর্বল হয়েছে। যার প্রভাব পড়ে আমদানি ও শিল্প পণ্যের দামে। এতে ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চাপ সৃষ্টি হচ্ছে মূল্যস্ফীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১তম মাস মে শেষে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৭৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এ খাতেও নিম্নগতি ছিল বেশকিছু দিন। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ভালো বলে মনে করছেন না তারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাস শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৩২৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে পাঁচ হাজার ৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতির দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭২২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী এক লাখ ৪৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার বেশি।

আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর বিপরীতে রফতানি বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। এপ্রিলেও এ ধারা অব্যাহত রযেছে।

Advertisement

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার (-) ঋণাত্মক হয়। যা এখনো অব্যাহত রযেছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের মে মাস শেষে ৯৩৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ২২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৮২০ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৪১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ১১ মাসে সেবায় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪০৮ কোটি ডলারে। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৩০০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে আর্থিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণ এসেছে ৩৪৮ কোটি ডলার, যা আগের একই সময়ের তুলনায় ৮২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। বিদেশি ঋণ বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ কম এসেছে। এ সময় ১৬০ কোটি ডলারের নিট বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ কম। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা বেড়েছে। জুলাই থেকে মে সময়কালে শেয়ারবাজারে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে মোট ২৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এফডিআই ছিল ২৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও সামান্য বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচিত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এসআই/এএইচ/আরআইপি