ক্যাম্পাস

স্মৃতি হয়ে থাকতে নবীন-প্রবীণ চিকিৎসকদের সেলফি-উচ্ছ্বাস

প্রাঙ্গণজুড়ে সাজসাজ রব। আলোকসজ্জা। বেলুন। ফেস্টুন। সঙ্গে আনন্দ উচ্ছ্বাস। নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। আড্ডা। র‌্যালি। চা চক্র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মধ্যাহ্নভোজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রিয় ক্যাম্পাসের ভবনগুলোয়, গাছতলা আর হোস্টেলে সময় কাটানো। একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়। পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মৃতিচারণের গল্প। স্মৃতি হয়ে থাকতে তুলেছেন সেলফি।

Advertisement

মঙ্গলবার দিনব্যাপী এমন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় কাটিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল আজ (১০ জুলাই)। এ উপলক্ষেই এমন সজ্জিত ক্যাম্পাসে মিলিত হয়েছিলেন তারা।

৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ডা. সাবিনা আক্তার। পেশাগত কারণে বর্তমানে থাকেন ময়মনসিংহে। সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানে গাইনি কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। শিক্ষাজীবনে অনেক বড় সময় যে ক্যাম্পাসে কাটিয়েছেন সেই ক্যাম্পাসের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি।

ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর থেকেই ব্যস্ত সময় কেটেছে। কত বন্ধু-সহপাঠী,ক্যাম্পাসের ছোট-বড় ভাই-বোনরা। যাকে দেখছেন তার কাছেই ছুটে যাচ্ছিলেন, করছিলেন কুশল বিনিময়।

Advertisement

ডা. সাবিনা আক্তার বলেন, এমন একটা দিনের জন্য আমরা পুরাতন শিক্ষার্থী অপেক্ষায় থাকি। অনেকে ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেন না। কিন্তু যারা আসে তারা হারিয়ে যায় সেই সোনালি দিনগুলোতে। শিক্ষাজীবনের অনেক দীর্ঘ সময় এই ক্যাম্পাসে কাটিয়েছি। এখানকার প্রতিটি ভবন, প্রতিটি গাছ, সবকিছুতেই আমাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাই এখানে আসলে পুরাতন বন্ধু সহপাঠীদের দেখলে, প্রিয় ক্যাম্পাসে সময় কাটালে আর আবেগ ধরে রাখতে পারি না।

ডা. রফিকুল ইসলাম। ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে সহাকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনিও এসেছেন ঢামেক দিবসের অনুষ্ঠানে। স্মৃতিচারণ ও আড্ডায় তিনিও কাটিয়েছেন ব্যস্ত সময়। ঘুরেছেন ক্যাম্পাসের স্মৃতিময় স্থানগুলোতে।

শুধু তাই নয়, প্রবীণ বা সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসে যুক্ত হন নতুনরাও, যারা কি-না বর্তমানে এখানে পড়ছেন বা কয়েক বছর আগে চিকিৎসক হয়ে বেড়িয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে একজন তুর্জ রহমান।

তিনি বলেন, এই দিনটা আমাদের কাছে নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলা। কতকত আগের শিক্ষার্থীরা, যারা কি-না আজ প্রতিষ্ঠিত নামকরা সব চিকিৎসক। তারা আসছেন, পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরছেন, সেই আগের ক্যাম্পাসের দিনগুলোর স্মৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে আমাদেরও সেইসময়ের গল্প শোনাচ্ছেন। যে কারণে আজ নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ।

Advertisement

উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই বাংলাদেশের প্রথম এই মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোনো ভবন ছিল না। যে ভবনে প্রথম কলেজ চালু হয়, তা ১৯০৪ সালে স্থাপিত হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সচিবালয় হিসেবে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলাও শুরু হয় এ ভবন থেকেই। একটি মাত্র ভবন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ। বর্তমানে কলেজ ও হাসপাতাল ভবন ছাড়াও ঢামেকে রয়েছে নিজস্ব মিলনায়তন, পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য আলাদা ভবন, চার তলাবিশিষ্ট আলাদা বার্ন ইউনিট, ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেলসহ নানা কিছু। এখানে প্রতিবছর প্রায় ১৮০ ছাত্রছাত্রী এ কলেজে ভর্তি হন এমবিবিএস কোর্সে। এ ছাড়া কলেজটিতে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স (এমডি ও এমএস) চালু আছে।

এএস/জেডএ/এমএস