আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গত দেড় যুগের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে আম। ক্রেতা না থাকায় আমের বাজারে ধস নেমেছে বলে জানিয়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ফরমালিনের অজুহাতে আম ধ্বংস, ফরমালিন ভীতি, আম পাড়ার সময় বেঁধে দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত চার বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যবসায় মন্দা চলছে।
Advertisement
জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে প্রায় দেড় মাস আগে উঠেছে আম। অথচ এখনো বাজার তেমন জমে ওঠেনি। এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে গুটি, গোপালভোগ ও খিরসাপাত জাতের আম। এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, আম্রপালি, বোম্বাই, ল্যাংড়া ও ফজলি জাতের আম।
ব্যবসায়ীরা জানান, আর কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে উঠবে আশ্বিনা জাতের আম। কিন্তু বাজারের মন্দাভাব কিছুতেই কাটছে না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অফিস জানায়, জেলায় এবার প্রায় ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আম গাছের পরিমাণ প্রায় ২২ লাখ। জেলায় প্রায় আড়াইশ জাতের আম চাষ হয়। এর মধ্যে গোপালভোগ, খিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, বোম্বাই খিরসা, ফজলী, আম্রপালি, আশ্বিনা জাতের আমই বেশি।
Advertisement
এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই কয়েক দফা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন আমচাষিরা। শুরুতে পর্যাপ্ত আমের মুকুল আসলেও বৈশাখ মাসে কয়েক দফা শিলাবৃষ্টিতে মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আম ঝরে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত যে পরিমাণ আম ছিল সঠিক মূল্য পেলে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারতেন আম চাষিরা। কিন্তু সে আশা পূরণ হলো না তাদের। বাজারে পর্যাপ্ত আম থাকলেও নেই ক্রেতা। অতিরিক্ত গরমের কারণে পেকে যাচ্ছে আম। তাই বাধ্য হয়ে গাছ থেকে আম পেড়ে কম দামেই বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান দুই আমবাজার শিবগঞ্জের কানসাট ও শহরের পুরাতন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আমের যথেষ্ট যোগান রয়েছে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে আম বিক্রি হচ্ছে কম। বর্তমানে ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এছাড়াও ফজলি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোম্বাই ২ হাজার ২০০ টাকা, আম্রপালি ২ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুমের শুরুর দিকে গোপাল ভোগ ও খিরসাপাত বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। অথচ গত বছর খিরসাপাত সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ল্যাংড়া ২ হাজার ৫০০ টাকা, বোম্বাই ২৫০০ টাকা, আম্রপালি ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের চেয়ে কম দামে আম বিক্রি হওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন শতশত আমচাষি।
শহরের পুরাতন বাজারের আম ব্যবসায়ী গোলাম মোর্তুজা বলেন, রমজান মাসে এমনিতেই আমের চাহিদা কম থাকে। এ বছর আমের ভরা মৌসুম পড়েছে রমজান মাসে। আশা করেছিলাম রমজান মাস শেষে হলে আমের বিক্রি বেড়ে যাবে কিন্তু রমজান শেষ হওয়ার পরও আম বিক্রি বাড়েনি। বাজারে পর্যাপ্ত আম থাকলেও ক্রেতা নাই। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ আম বিক্রি হয় এ বছর তা শতকরা ৩০ ভাগ বিক্রি কমে গেছে। জেলার বাইরের কোনো পাইকার এখন পর্যন্ত আসছে না। ফলে চাহিদা না থাকায় আমের দাম এ বছর খুবই কম।
Advertisement
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মসজিদ পাড়ার আম ব্যবসায়ী সুকুমার ও শাহালাল জানান, আম বাগানের পরিচর্যায় সার-বীজ এবং শ্রমিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এক মণ আমে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু সেই আম বিক্রি করতে হয়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। মৌসুমের শেষে লাভতো দূরের কথা, পুঁজি খুজে পাওয়া যাবে না। দেড় যুগের মধ্যে আমের দামে এমন বিপর্যয় দেখেননি তারা।
বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিওসার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ জানান, আমের দাম কম হওয়ায় এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের ৫০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ও চাষি পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ/আরএআর/জেআইএম