দেশজুড়ে

রাসিকের ভোটারদের ভাবনায় সড়কের খানাখন্দ

গ্যাস ও পানি সংযোগের কারণে খোঁড়া হয়েছে রাজশাহী নগরীর বেশিরভাগ সড়ক। মাঝে কিছু সড়ক মেরামতও করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। এতে চলাচলে নগরবাসীর দুর্ভোগের অন্ত নেই। আসন্ন সিটি নির্বাচনে তাই ভোটারদের ভাবনায় ঘুরেফিরে এসেছে সড়কের এই দুর্ভোগ।

Advertisement

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজশাহী নগরীতে সবমিলিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর একটি বড় অংশ গ্যাস ও পানি সংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব সড়কের ৮০ শতাংশ পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হয়েছে। এখন নির্বাচনের কারণে থমকে গেছে সড়ক সংস্কার। নির্বাচন শেষ হলেই শুরু হবে সড়ক মেরামতের বাকি কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯৭ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী নগরীতে হোল্ডিং সংখ্যা ৪৭ হাজার। নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা ৪ লাখ ৯০ হাজার ৩২২ জন। এর বাইরে আরও ৪ লাখ মানুষ অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন নগরীতে। ৩০ ওয়ার্ডের নগরীতে মহল্লা রয়েছে ১৩৪টি। এখানকার মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন।

রাসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের কিছু কিছু মেরামত হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক মেরামত কাজ শেষ। গ্যাস সংযোগ শুরুর বছরই (২০১১-২০১২) ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্যাকেজ মেরামত কাজ শেষ হয়।

Advertisement

সর্বশেষ ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে তিনটি গ্রুপে গ্যাস-পানি সংযোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে মেরামতে ব্যয় হয় ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ থেকে এসব সড়ক মেরামত করা হয়।

তবে বাস্তবের চিত্র ভিন্ন। নগরীর প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে বেশিরভাগ সড়কে এখন খানাখন্দে ভরা। এসব খানাখন্দ তৈরি হয়েছে গ্যাস-পানি সংযোগের পর খোঁড়া সড়ক মেরামত না করায়। কোথাও কোথাও যাচ্ছেতাইভাবে মেরামতের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে সড়ক। এরই মধ্যে বর্ষা চলে আসায় পানি জমে বড় হচ্ছে গর্ত। এতে চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বিষয়টি।

নগরীর ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আবাসিক গ্যাস ও পানির সংযোগ নিয়েছেন। সংযোগ নেয়ার আগেই সড়ক খোঁড়ার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছেন। অথচ রাসিক এসব গর্ত মেরামত না করে কোনোরকমে ঢেকে দিয়েছে। দীর্ঘদিন যান চলাচলের ফলে এসব গর্ত বড় হচ্ছে। আর নতুন করে খোঁড়া গর্ত মেরামত হচ্ছে না। এতে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তির অন্ত নেই তাদের। এ জন্য সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন নগরবাসী।

নাগরিকদের এমন বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে রাসিক, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) এবং রাজশাহী ওয়াসা।

Advertisement

রাসিক সূত্র জানায়, পিচমোড়া সড়ক কাটতে প্রতি বর্গ মিটারে ক্ষতিপূরণ ৩ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়া ফুটপাতে এক হাজার ৯৩৯, সিসি সড়কে এক হাজার ৮২৪ এবং ইটের সড়কে ৯৯০ টাকা ক্ষতিপূরণ পায় রাসিক। গ্যাস-পানি সংযোগসহ যে কোনো সেবা নিতে সড়ক কাটার বিল আগেই পরিশোধ করতে হয় নগর সংস্থাকে।

পিজিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৭ জুন থেকে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নগরীতে ৯ হাজার ১৬৭টি গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। গড়ে ৫ হাজার টাকা করে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ওপরে সড়ক খোঁড়ার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন সেবাগ্রহীতারা। বর্তমানে সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সংযোগ পেতে এরই মধ্যে নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন ৫৫০ জন আবাসিক গ্রাহক। জমা পড়েছে আরও ১১ হাজার আবেদন।

সম্প্রতি নগরীর ৯০ কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে পানি সরবরাহ লাইন বসিয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। এই বাবদ নগর সংস্থাকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ওয়াসার। কিন্তু এখন পর্যন্ত সংস্থাটি দিতে পেরেছে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বাকি সোয়া দুই কোটি টাকা শিগগিরই জমা হওয়ার কথা নগর সংস্থার তহবিলে।

বিয়ষটি নিশ্চিত করে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, প্রকল্পকাজে তারা যে সড়ক খুঁড়েছেন তার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে প্রায় অর্ধেক পরিশোধ করা হয়েছে। বাকিটা শিগগিরই পরিশোধ করা হবে। সড়ক সংস্কার না হওয়ায় নগরবাসী ওয়াসাকেও দোষারোপ করছেন।

পিজিসিএলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এএফএম আজাদ কামাল দুলাল জানান, সিটি কর্পোরেশনের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ছাড়পত্র পেলেই সড়ক খুঁড়ে পিজিসিএল। সেই হিসেবে তাদের গ্রাহকরা আগেই পরিশোধ করেছেন ক্ষতিপূরণের অর্থ। সড়ক খোঁড়ার আগে নগর সংস্থার সঙ্গে যৌথ জরিপ হয়েছে। ফলে এ নিয়ে তাদের কোনো দায় নেই।

তবে কিছু সড়ক সংস্কারের বাকি আছে বলে স্বীকার করেছেন রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় সড়ক মেরামতের প্যাকেজ কাজ হয়েছে। এখনও কিছু কাজ চলমান। নির্বাচন শুরু হওয়ায় থমকে গেছে মেরামত কাজ। নির্বাচন শেষ হলেই এসব কাজ শুরু হবে।

তবে ঘুরেফিরে এর দায় চাপছে রাসিকের সদ্য বিদায়ী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাঁধে। এবার বিএনপির প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন বুলবুল।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। নগর কর্তৃৃপক্ষ সড়ক মেরামত করছে, পরে ওই সড়ক খুঁড়ে ফেলছে ওয়াসা-পিজিসিএল। নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে সব সেবা সংস্থা নগর সংস্থার আওতায় এনে সিটি গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠার দাবি জানান বুলবুল। এছাড়া নগরীর সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে এবারের বাজেটে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এএম/এমএস