কৃষি ও প্রকৃতি

কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে প্রান্তিক কৃষক। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামলে কৃষকরা মাঠে ফসল উৎপাদন করছেন। নানা বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে প্রান্তিক এই কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করতে পারেন না। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সজীব রায়-

Advertisement

কৃষকদের নানা সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন দফতরে কাজ করছেন সরকারি কর্মকর্তা। বিভিন্ন পরামর্শের মধ্য দিয়ে তারা কৃষকদেরকে সহযোগিতা করছেন। সরকারি এই কর্মকর্তাদের সেবার মান আরও উন্নত করতে এবং কৃষকের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম।

তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির সিনিয়র সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন সিদ্দিকী সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ কৃষকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে তৈরি করেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’। ডিজিটাল এ উদ্ভাবন বাস্তবায়নের সময় তিনি বেলকুচি উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

জানা যায়, বেলকুচি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টি ইউনিয়ন দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। এসব ইউনিয়নের যাতায়াত ব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। এই প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকদের ক্ষেত্রে দূর-দূরান্ত থেকে উপজেলা অফিসে এসে পরামর্শ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য, সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। পাশাপাশি অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং পরামর্শ প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে কৃষকদের পক্ষে উৎপাদন পদ্ধতি, রোগবালাই ও অন্যান্য সমস্যার কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এ জনদুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে সার-বালাইনাশক বিক্রেতা, এনজিওকর্মী, কৃষক সংগঠন প্রতিনিধি, কৃষক প্রতিনিধি ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সেবা প্রদান কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এ কার্যক্রমের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- কৃষকদের ফসল চাষ পদ্ধতি, রোগবালাই ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান। একটি অফলাইন সফটওয়্যার তৈরি এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।

Advertisement

> আরও পড়ুন- পেঁপে চাষ করে সফল তাপস

সূত্র জানায়, এটুআই প্রোগ্রামের ৫ দিনের ইম্প্যাথি প্রশিক্ষণ শেষে টিম গঠন করে বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ও দৌলতপুর ইউনিয়নে ২০১৪ সালের ১ জুলাই পাইলটিং কার্যক্রম শুরু করেন। পাইলট উদ্যোগের মাধ্যমে একটি অফলাইন সফটওয়্যার, ২১ জন স্বেচ্ছাসেবী তৈরি হয়। উদ্ভাবিত ওয়েবসাইটে ফসলের চাষ পদ্ধতি, বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের ছবি, কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার পদ্ধতি ও অন্যান্য সমস্যাবলীর সচিত্র সমাধান দেওয়া আছে। ফলে একজন কৃষক নিজে নিজেই তার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। পরবর্তীতে সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় অধিকতর যাচাইয়ের জন্য দ্বিতীয় পাইলটিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সেখানে ‘কৃষকের ডিজিটাল ঠিকানা’ নামে একটি অনলাইন পোর্টাল (digitalkrishi.dae.gov.bd/download/app) এবং একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি হয়। এই উদ্যোগের ফলে সহজেই কৃষকগণ পরামর্শ সেবা গ্রহণ করতে পারছেন, ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে- যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সূত্র আরও জানায়, এ উদ্ভাবনের ফলে এখন পর্যন্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। ডিজিটাল এ উদ্ভাবনের ফলে আগের তুলনায় কৃষকদের সেবা পেতে কম সময় লাগছে। আগে যেখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে ১ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সময় দরকার হতো। উদ্ভাবনের ফলে সেই সেবা পেতে এখন ১ থেকে ৩ দিন লাগছে। এছাড়াও খরচ যেখানে ৬০০ থেকে ১৮ টাকা লাগত তা এখন ৬০০ টাকার মধ্যেই হচ্ছে।

উদ্যোক্তা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখা গিয়েছিল। যেমন- তথ্য ও ছবি সংগ্রহ, ডাটা ভেলিডেশন, দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনাগ্রহ ইত্যাদি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে এটি সারা দেশব্যাপী রেপ্লিকেশন হচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষি সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য উদ্যোগটি ৩টি জাতীয় ও ৪টি স্থানীয় পুরস্কার অর্জন করে।

Advertisement

> আরও পড়ুন- নওগাঁয় বাড়ির ছাদে বাগান

এ ব্যাপারে মুহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন সিদ্দিকী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও নাগরিক সেবাকে সহজিকরণে এটুআইয়ের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটুআই থেকে দেওয়া ইম্প্যাথি প্রশিক্ষণের ফলে আমাদের চিন্তার পরিধি প্রসারিত হয়েছে। আর তারই ফলশ্রুতিতে আমার এই উদ্ভাবনের ফলে প্রান্তিক কৃষকদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হয়েছে।

এসইউ/পিআর