দেশজুড়ে

কচুরিপানার ধাপের ওপর সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী

বরিশালের হিন্দু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ৫ শতাধিক দরিদ্র পরিবার কচুরিপানার ধাপের উপর সবজি চাষ ও বিভিন্ন চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। জানা গেছে, এই নিম্নাঞ্চলের জলাভূমির কচুরিপানা স্তুপ করে ধাপ তৈরি করা হয়। ধাপগুলোতে প্রধানত লালশাক, পুঁইশাক, ডাটা, মরিচ, করলা, ঢেঁড়শ, হলুদ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকে। প্রায় বার মাসই বিলাঞ্চলে এ ধরনের সবজি চাষ করা হয়। এছাড়া বটবটি, সিম, পেঁপেঁ, লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুনসহ নানা জাতের সবজির চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করে এ উপজেলার তিনটি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার নিজেদের অভাব দূর করতে সক্ষম হয়েছেন। উপজেলার গোয়াইল গ্রামের মিরাজ বিশ্বাস দীর্ঘ ১৫ বছর, মোকসেদ বিশ্বাস ২৫, ইউনুস ঘরামী ১৫, সিরাজ ২০, বেল্লাল হোসেন ১৫, তোফাজ্জেল হোসেন ২০ বছর, বাশাইল গ্রামের খালেক সরদার ২৬, ছোট বাশাইল গ্রামের শামসু সরদার ২৫ বছর ধরে ধাপের ওপর বিভিন্ন জাতের সবজির চারা করে তা বিক্রি করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান। চাষী মিরাজ বিশ্বাস (৩৫) সাংবাদিকদের জানান, তার বাবা সবজির চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করতেন। এখন নিজেই এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বিভিন্ন জাতের সবজির চারা উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। চাষিরা এস ময় বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কচুরিপানার বড় বড় দলকে সন্নিবেশিত করে রেখে দেন। কয়েক দিনের মধ্যেই তাতে পঁচন ধরে। পঁচন ধরা কচুরিপানাই হয়ে যায় ধাপ। প্রতিটি ধাপেই পর্যাপ্ত জৈবসারের কারণে সবজির চারাগুলো অত্যন্ত উর্বর হয়। চাষী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে বিভিন্ন জাতের সবজির বীজ ক্রয় করে বাড়িতে মাঁচা বেঁধে সবজির বীজ দিয়ে চারা গজিয়ে তা ভাসমান ধাপের ওপর রাখা হয়। প্রথমবার একমাস পরিচর্যার পর চারাগুলো বিক্রি করা হলেও পরবর্তীতে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি করা যায়। এভাবেই প্রতিটি ধাপে ৪ বার চারা উৎপন্ন শেষে তা বিক্রি করা হয়। সবজির চারাগুলো এখান থেকে ফরিদপুর, চাঁদপুর, মাগুরা, ফেনীসহ স্থানীয় হাট-বাজারের পাইকাররা ক্রয় করে নিয়ে যায়। চাষী মামুন হোসেন (৬৫) জানান, তাদের উৎপাদিত চারা একশ’ পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। পরিচর্যাসহ তাদের একশ’ চারা বিক্রির উপযোগী করতে খরচ হয় দুই`শ টাকা। আর তা বিক্রি করা হয় তিন থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায়। তিনি আরো জানান, তাদের এ চারার ব্যবসায় বাড়ির গৃহিণীরা সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখেন।স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাশাইল, গোয়াইল ও ছোট বাশাইল গ্রামে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগ থেকেই ধাপের ওপর সবজির চারা করে তা বিক্রি করা হয়। ধাপের ওপর স্বল্প সময়ের মধ্যে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে চাষিরা অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে। ওই তিন গ্রামের দারিদ্র মানুষকে এ পেশার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে দেখে তাদের অনুসরণ করে বর্তমানে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লীর উন্মুক্ত জলাশয়ে একই পদ্ধতিতে সবজি চাষসহ সবজির চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিণ নাঘিরপাড়, চান্দ, বাগধাসহ পার্শ্ববর্তী উজিরপুরের সাতলা, জল্লা, কোটালীপাড়ার বিশারকান্দি, ধারাবাশাইল, মাচারতাঁরা, তালপুকুরিয়া, ডুমুরিয়া, তারাকান্দর, ছত্রকান্দা, রামশীল, কলাবাড়ী, শুয়াগ্রাম, সাতুরিয়া, আলামদি, নারায়ণখানা ও সাদুল্লাপুর গ্রামের শতকরা ৭০ ভাগ লোক এই মৌসুমে ধাপের ওপর সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনের ব্যবসাকে বেছে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, এ পদ্ধতিতে চাষে খরচ অত্যন্ত কম কিন্তু লাভ বেশি হওয়ায় এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পেশা হিসেবে দরিদ্র কৃষকরা এদিকে ক্রমশ ঝুঁকে পড়েছে। চাষিদের ভাষ্যমতে, স্থানীয় কৃষি অফিস চাষীদের উদ্বুদ্ধসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতা করলে ধাপের ওপর সবজি চাষের ব্যাপকতা যেমন বাড়বে তেমনি চাষীদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারে সবজির চাহিদাও পূরণ সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কোনো চাষি যদি আমাদের কাছে সহযোগিতা বা পরামর্শের জন্য আসে তবে তাকে সহযোগিতা করা হবে। এসএস/এমএস

Advertisement