খেলাধুলা

অঝোরে কাঁদছে রাশিয়া

শনিবার বিকেল থেকেই মুখ গোমরা করে ছিল মস্কোর আকাশ। কখনো ফোটাফোটা পানিও ছেড়েছিল পাতালে। তাহলে কী রাশিয়ার আকাশ আগেই টের পেয়েছিল ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তাদের দৌড়টা শেষ হতে যাচ্ছে?

Advertisement

আকাশ যাই টের পাক, যাই মনে করুক-রাশিয়ানরা তা কেয়ার করলে তো। সন্ধ্যার পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই মস্কোর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ছুটলো ফিফা ফ্যান ফেস্টের দিকে। মস্কো থেকে প্রায় সাড়ে ১৬০০ কিলোমিটার দূরের শহর সোচিতে যখন রাশিয়ান ফুটবলারদের সেমিতে ওঠার যুদ্ধে নামের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন মস্কোর মানুষের চলছিল টিভি পর্দায় তা দেখার।

শুধুই কী মস্কো? রাশিয়ার সব শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল-প্রত্যেক ঘরেঘরে তখন আকিনফিভ-চেরিশেভদের ফুটবল নৈপুণ্য দেখার প্রস্তুতি। সন্ধ্যার পর মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে ফেরার পথে প্রথম টের পাওয়া গেলো সোচির ম্যাচ দেখতে তাদের প্রস্তুতিটা কী।

হাতে ছিল রাশিয়ান পতাকা, মাথায় ক্যাপ। তরুণ-তরণীদের মুখে উলকী। কারো হাতে ভুভুজেলা। সবাই ছুটছে ফ্যান ফেস্টে-সেখানে উৎসবে রাশিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল দেখতে। চেরিশেভের দুর্দান্ত গোলে স্বাগতিকরা যখন এগিয়ে গেল তখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশটির সব মানুষ যেন এক সঙ্গে উচ্চারণ করলো ‘রাশিয়া-রাশিয়া।’ পটকার শব্দও কানে আসলো বিভিন্ন দিক থেকে।

Advertisement

হালকা বৃষ্টি। সময় গড়ানোর সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডা। এক সময় যা অনেক ভীনদেশির কাছে যা হাঁড় কাঁপানোর মতো। রাশিয়ানদের কাছে ওই ঠান্ডা কিছুই নয়। তারপর কিছুক্ষণ বাদেবাদেতো গলায় কিছু ঢালছেন। নাচছেন, গাইছেন। ঠান্ডা তাড়াতে আর কী লাগে?

পিছিয়ে পড়া যাওয়া ম্যাচে ফিরলো ক্রোয়েশিয়া। রাশিয়ানরা তারপরও আশায় বুক বেঁধে ছিল। গোল আর হলো না। ম্যাচটা গেলো অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ক্রোয়েশিয়া যখন এগিয়ে গেলো তখন সোচি থেকে পুরো রাশিয়ায় বিদায়ের আগামবার্তা। কিন্তু রাশিয়ানরাতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়। ১০০ মিনিটে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে রাশিয়া ফিরলো ১১৫ মিনিটে।

কোয়ার্টার ফাইনালের ভাগ্য যখন গড়ালো টাইব্রেকারে তখনতো রাশিয়ানরাই বেশি খুশি হয়েছিল। তাদের একজন আকিনফিভ আছেন না? দ্বিতীয় রাউন্ডে টাইব্রেকারে স্পেনকে হারানোর নায়ক যে পোস্টের নিচে। এ যুগের লেভ ইয়াসিনের খেতাব পাওয়া এ গোলরক্ষক নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে টাইব্রেকারে পিছিয়ে পড়া রাশিয়াকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরিয়েছিলেন। তারপরও শেষ হাসি হাসতে পারেনি লেলিন-পুতিনের উত্তরসূরীরা।

ক্রোয়েশিয়ার রাকিটিচের নেয়া শেষ শটটি লক্ষভেদ হওয়ায় শুধু পোস্টের জালই কাঁপলো না। কেঁপে উঠলো পুরো রাশিয়া। সোচির স্টেডিয়ামের গ্যালারির হাজার হাজার স্বাগতিক দর্শকের গালবেয়ে জড়িয়ে পড়ছে চোখের পানি। টিভি পর্দায় সে দৃশ্য থেকে দেশটির প্রতিটি কোনে কান্নার রোল। বিশ্বকাপ থেকে তাদের যে বিদায়।

Advertisement

রাশিয়ার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত আসাটাই ছিল অপ্রত্যাশিত। দেশটি যদি গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতো তাহলে শনিবারের রাতের মতো হয়তো কাঁদতো না তারা। এ দলটি গ্রুপ পর্ব টপকাবে সে আশাতো ৬ ভাগ রাশিয়ানদেরও ছিল না। ওই যে, যত পাই তত চাই। রাশিয়ানদে আশার প্রদীপ জ্বেলেছিলেন ফুটবলাররাই। তাইতো কোয়ার্টার ফাইনালে এসে বিদায় নেয়ায় দেশের মানুষের বুকফাটা কান্না।

ম্যাচের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী ত্রিমিত্রি মেদভেদেভ তাদের বীর ফুটবলারদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সব বিদায়েই কষ্ট আছে। কিছু ঘরে ফেরা আছে মাথা উঁচু করেও। এই বিশ্বকাপে রাশিয়ার বিদায়তো তেমনই।

শনিবার রাতের ম্যাচের পর রোববার সকাল পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে রাশিয়ায়। বিশেষ করে মস্কোতে। ভোর রাতের মুশলধারের বৃষ্টি যেন বিশ্বকাপ থেকে রাশিয়ার বিদায়ের কান্না। আগের দিন বিকেলে রাশিয়ান সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের প্রস্তুতি যেমন ছিল, তেমন ছিল আকাশের বৃষ্টির প্রস্তুতি। রাতের হার মানুষের চোখের পানি আর বৃষ্টি পানি যেন এক করে দিলো দেশটির কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়।

আরআই/এসএএস/জেআইএম