মতামত

মামলা দিয়ে কি সংসার টেকানো যায়, শ্রাবন্তী?

আমার ছোট ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তার খুব ইচ্ছে আমি তার অফিসে যাব একদিন। ইচ্ছে থাকলেও সবসময় উপায় নেই। ব্যস্ততায় কাজ ছাড়া যাওয়া হয় না কোথাও, সময় নেই। সেদিন বাড়ি ফেরার পথে খানিকটা রাত হয়ে গেছে। ভাবলাম, ভাইটিকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরি। কিন্তু সেকি কাণ্ড! রাত ১২টা পেরিয়ে গেছে, অথচ ছোট ভাইয়ের অফিসটি রীতিমত বাজার মনে হচ্ছে।

Advertisement

ইন্সপেক্টর অপারেশনের রুমটা কোনদিকে, বলতেই একজন দেখিয়ে দিল। রুমের সামনে দাঁড়াতেই আমার ভাই বেশ বিব্রত। ভেতরে লোকজন বেশ। কোন রকম একটা সোফার এক কোণে বসি। বচসা চলছে, ইস্যু দাম্পত্য। অবশ্য বচসা না বলে খিস্তি খেউর বলা ভালো। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব।

লোকটি তার স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে চান না। স্ত্রীরও রীতিমত অশ্লীল আক্রমণ। ‘তুমি পার না, করো না। তুমি পুরুষ না।’ একের পর এক বলেই চলেছেন। তাদের ১৬/১৭ বছরের ছেলেটিও সেখানে উপস্থিত। এক পর্যায়ে লোকটি বলেই বসলেন, ছেলের স্যারের সঙ্গে যে তোমার পরকীয়া, সব ডকুমেন্টস আছে আমার কাছে। যে মহিলা এতক্ষণ স্বামীকে অক্ষম, উত্থানহীন বলে আক্রমণ করছিলেন, সেই তিনিই এখন বলছেন উল্টো কথা।

আর বলবেন না ইন্সপেক্টর সাহেব, আমার স্বামী একটা লম্পট, লুচ্চা। বাসায় কাজের লোক টেকে না। কোন কম বয়সের কাজের মেয়ে বাড়িতে রাখতে পারি না। এমনকি বয়স্ক মহিলারাও ওর কাছে নিরাপদ নয়, ছাড়ে না। ক’দিন ধরে অনলাইনে অভিনেত্রী ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীর ডিভোর্সের খবর পড়তে পড়তে এ ঘটনাটি কেন যেন মনে পড়ে গেল। শ্রাবন্তীর ডিভোর্সের সঙ্গে ঘটনাটি মেলাবার কোন প্রয়োজনও নেই। তবে প্রায় একই ধরনের বা কাছাকাছি কোন ঘটনা হলে আমরা হয়তো মিল খুঁজতে যাই। এ আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি।

Advertisement

তবে মিল বা অমিল যাই থাকুক বা না থাকুক আমি বরাবরই যে কোন ঘটনা যুক্তি দিয়ে বুঝবার চেষ্টা করি। অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর একটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ভাইরাল হয়েছে। অনেক নিউজও হয়েছে, যেহেতু তিনি এক সময়ের মডেল ও অভিনেত্রী। শ্রাবন্তীর ফেসবুক পোস্ট ও কর্মকাণ্ড দুটোর মধ্যে সমন্বয় কম পেয়েছি। মনে হয়েছে, কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই। তিনি নিজেও অনেকটা এলোমেলো।

শ্রাবন্তীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামী আলমকে ধরে রাখবার জন্য প্রবল আকুতি লক্ষ্য করা যায়। তাদের সন্তান আছে, সংসারটি যেন টেকে এমন করুন আবেদন তিনি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যও চেয়েছেন। স্বামী আলম তার সব কিছু জেনে বিয়ে করেছেন, অমনও বলেছেন। ‘সব কিছু’ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন তা অবশ্য প্রকাশ করেননি।

আগেই বলেছি আমি যুক্তিপ্রবণ মানুষ। কৃত্রিম সিনথেটিক ইমোশন আমাকে স্পর্শ করে না। কেবল সততা, মানবিকতার শক্তি ও সৌন্দর্যই আমাকে আন্দোলিত করে। খুব বিস্মিত হয়েছি, যে শ্রাবন্তী আপনি ইনিয়ে বিনিয়ে এত কিছু লিখেছেন, সেই আপনিই আমেরিকার ফ্লাইট থেকে নেমে স্বামী আলমের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা করেছেন। মামলা দিয়ে কী সংসার টেকানো যায়? মামলা তো হয় অপরাধীর বিরুদ্ধে। অপরাধীই যদি হয়ে থাকে তাহলে একটা ক্রিমিনালের সঙ্গে এত থাকতে চাচ্ছেন কেন? ক্রিমিনালের সঙ্গে থাকার এত শখ কেন, সুখ কোথায় জানি না আমি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক স্বামী আলমের বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়া পরকীয়ার অভিযোগও করেছেন। পরকীয়া সামাজিক বিবেচনায় অন্যায়, ধর্মীয় বিবেচনায় পাপ। অথচ খুব অবাক হচ্ছি, এই আপনিই গায়ক পার্থ বড়ুয়ার সঙ্গে নিউ ইস্কাটনের মোনা টাওয়ারে দীর্ঘদিন একত্রবাস করেছেন, লিভ টুগেদারে থেকেছেন। যেটি বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। সেটি তো পরকীয়াই ছিল নাকি?

Advertisement

সে সময়ে পত্র পত্রিকায় আপনি সাক্ষাৎকারও দিয়েছিলেন। নিজের জীবন দিয়ে সমর্থন করেছিলেন পরকীয়াকে। পার্থ বড়ুয়ারও সন্তান ছিল, স্ত্রী ছিল। এখন কেন মেনে নিতে পারছেন না আপনি?

তবে শ্রাবন্তীর স্বামী খোরশেদ আলম পত্রিকায় বলেছেন তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস নেই বললেই চলে। বাকিটুকু পুরোপুরি না থাকবার আগেই তিনি সরে এসেছেন।

আমাদের স্বামী-স্ত্রীর বিশ্বাস নেই, ভালোবাসা নেই, শ্রদ্ধা নেই তবু এক ছাদের নিচে দিনের পর দিন থাকেন। সন্তানও হয় তাদের। এই সংখ্যাটিই বেশি। অথচ মনে রাখা প্রয়োজন, এক সঙ্গে থাকা আর যৌন সম্পর্ক টিকে থাকা মানে সম্পর্ক নয়, দাম্পত্য নয়, সংসার নয়।

অনেকেরই মনে হতে পারে, নারীবাদী লেখক হিসেবে অমন একটি লেখা আমি কেন লিখলাম। আমার কাছে নারীবাদ মানে নারী হবার কারণে আমি যেন কোন অসুবিধার শিকার না হই, বাড়তি সুবিধেও না নেই। আমার কাছে সমতাই নারীবাদ। যা আমার জন্য ভালো তা যেন অন্যের জন্যও হয়, বিপরীতভাবে মন্দও।

পুরুষতান্ত্রিকতার বিশাল জাল দুনিয়াজুড়ে। যে জালের কৃত্রিম আলো, আকর্ষণে নারীও প্রবল পুরুষতান্ত্রিক হয়ে উঠে। পুঁজিবাদ তাকে ভোগবাদি করে তোলে, এক সময় নিঃস্ব করে, একা করে এক দুর্বিপাকে ছুঁড়ে ফেলে। সেই দুর্বিপাকে পড়ে নারী, অন্য নারী-পুরুষকেও তার শিকারে পরিণত করতে চায়।

কেউ কারো শিকার না হোক। মানুষ তার স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচুক, কেউ কারো অধীনে না থাকুক। জগতের সকল মানুষ সুখী হোক। সুখী হোক। সুখী হোক। লেখক : সম্পাদক, আজ সারাবেলা। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মিডিয়াওয়াচ। পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন। সদস্য, ফেমিনিস্ট ডটকম, যুক্তরাষ্ট্র।

এইচআর/পিআর