ধর্ম

শিশু ও কন্যা সন্তানদের ভালোবাসবেন কেন?

আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতিটি ভালো কাজের প্রতিদান দান করেন। এ প্রতিদান অনেক গুণ বেশি দান করেন বলে কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, সন্তানের প্রতি আদর-স্নেহ ও মায়া-মততায়ও রয়েছে উত্তম প্রতিদান।

Advertisement

হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন দয়া-মায়া পোষণকারী ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলাও রহমত দান করেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি দয়া করেন না, যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামের প্রাথমিক যুগে শিশু সন্তানদের আদর-স্নেহ বা চুম্বন করা হতো না। শিশু সন্তানদের আদর-স্নেহ ও চুম্বন প্রসঙ্গে অন্য হাদিসে এসেছে-

Advertisement

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একবার এক বেদুঈন (গ্রামের লোক) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের কাছে এসে দেখল যে, সাহাবায়ে কেরাম তাদের শিশু সন্তানদের চুমু খেয়ে আদর করছেন। তা দেখে সে বলল, তোমরা কি তোমাদের শিশু সন্তানদের চুম্বন কর, আমরা তো তা করি না।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের অন্তর হতে স্নেহ ও মমতা উঠিয়ে নিলে আমি কি তাতে বাধা দিতে পারি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

কন্যা সন্তানের প্রতি ভালোবাসার প্রতিদানপ্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানকে দোজখের আগুনের প্রতিরোধকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হলে অনেক পিতা-মাতা খুশি হতে পারে না। অথচ হাদিসে পাকে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতার ব্যাপারে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, একদিন এক নারী আমার কাছে আগমন করে। তার সঙ্গে দুটি কন্যা সন্তানও ছিল। ওই নারী আমার কাছে কিছু খবার চাইলে আমি তাকে কিছু দিলাম।

Advertisement

কিন্তু তখন সে নিজে না খেয়ে (খাবারগুলো তার) কন্যা দুটিকে দিয়ে দেয়। নিজের জন্য কিছুই রাখল না। অতঃপর সে চলে যায়।

এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হলেন। আমি এ ঘটনাটি তাঁর কাছে বললাম। তিনি বললেন-‘যেসব ব্যক্তি কন্যা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে এবং ওই অবস্থায় তাদের সঙ্গে এরূপ সদাচরণ করেছে, এ কন্যারা তার জন্য দোজখের আগুন হতে প্রতিরোধকারী হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আরও পড়ুন > শিশুর নাম যে কারণে সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া জরুরি

কন্যা সন্তানকে লালন-পালনকারী ব্যক্তির সম্মানপ্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানদের সুন্দরভাবে লালন-পালনে সুসংবাদ প্রদান করেছেন। তারা কেয়ামতের দিন প্রিয়নবির সঙ্গেই থাকবে।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যা সন্তানকে প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব বহন করবে; আমি এবং সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন এভাবে এক সঙ্গে থাকব। এ কথা বলে তিনি হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে দেখালেন।’ (মুসলিম)

সুতরাং শিশু ও কন্যা সন্তানদের প্রতি অবহেলা ও অনাদর নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ, সাওয়াব ও কেয়ামতের দিন প্রিয়নবির সঙ্গী হওয়ার মর্যাদা লাভে তাদের (শিশু কন্যা সন্তানদের) প্রতি আদর-স্নেহ ও মায়া-মমতার পাশাপাশি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা জরুরি।

শিশু ও কন্যা সন্তানদের প্রতি বিরক্ত নয়; তাদেরকে ভালোবাসুন। আদর-যত্ন করুন। সুশিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিন। কুরআন ও হাদিসের শিক্ষায় আলোকিত জীবন লাভে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিশু ও কন্যা সন্তানদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। পরকালে আল্লাহর রহমত ও প্রিয়নবির সংস্পষ্ট লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস