আন্তর্জাতিক

কামনার বশে ইন্টারনেটে প্রতারিত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

রাহুল মেহতা (ছদ্মনাম) ফেব্রুয়ারি এক সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাসায় ফেরেন। ফ্রেশ হয়ে যখন ঘুমাতে যাবেন, তখন রাত হয়েছে অনেক। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে অন্যান্য দিনের মতো মোবাইলে ডেটিং অ্যাপ টিপাটিপি শুরু করে দিলেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই-একজন সম্ভাবনাময় সঙ্গীকে খুঁজে পাওয়া। হঠাৎ একটি মেসেজ আসল-‘হাই, আমি আরিজ। চল চ্যাট করি।’ আমার একজন পরিচিত মেয়ে আছে। সে অনেক সুন্দর। গাঢ় কেশ। আকর্ষণীয় ত্বক, মায়াবী চোখ। ও মরক্কোর বাসিন্দা। জানায় আরিজ।

Advertisement

ফোনের ওপ্রান্ত থেকে এমন চিত্তাকর্ষক অফার শুনে লুফে নেন মেহতা। কল্পনায় ডুবে যান কখন এ মনোহরিণীর সাথে ডেটিং করে বাস্তবের স্বাদ নেবেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা একে-অপরের সাথে চ্যাট শুরু করে দিলেন।

এক সন্ধ্যায় ওই নারী চ্যাটে লেখেন-‘তোমার টি-শার্ট খুলে ফেল।’ রমণীর ওই কথা শোনামাত্র রাহুল করলেনও তাই। পরবর্তী বিষয়টি তার জানাই ছিল। এরপর তিনি তার নিচের পোশাকটিও খুলে ফেললেন। অতপর.....।

কয়েক মিনিট পর আরেকটি মেসেজ। ওই মেসেজে একটি ভিডিও রেকর্ডের লিঙ্ক দিয়ে অপরপ্রান্ত থেকে কর্কশ কণ্ঠে বলা হয়-‘তোমাকে বোকা বানানো হয়েছে। আমি একজন পুরুষ, নারী না। তুমি যদি আমাকে ২ হাজার মার্কিন ডলার (পৌনে ১৪ লাখ ভারতীয় রুপি) না পাঠাও, তাহলে আমি এই ভিডিও তোমার বন্ধু-বান্ধবী, পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেব।’ ভয়ে-লজ্জায় ওই সফটওয়্যার প্রকৌশলী ওই ব্যক্তির সাথে আপোষ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে এত টাকা নেই, আমি সর্বোচ্চ দেড় হাজার মতো দিতে পারব।’ এরপর তিনি ওই ব্যক্তিকে দেড় হাজার টাকা পাঠান এবং ফোন থেকে তাকে ব্লক করে দেন।

Advertisement

পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি রাহুলের কাছে আরও সাত হাজার রুপি দাবি করে। এবার তিনি টাকা না দিয়ে আইনশৃঙ্লা রক্ষাকারী এজেন্সির শরণাপণ্ন হন।

মানুষ লোভ ও কামনার বশে এভাবেই প্রতারিত হয়ে আসছে। এক-বিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের ঘটনা সেক্সটরশন বা সেক্সুয়াল এক্সটরশন বলে পরিচিত।

মানসিক ও আর্থিক উভয় দিক দিয়েই ক্ষতিকর এ ধরনের সাইবার ব্ল্যাকমেল ভারতে অতি সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে মাইক্রোসফট দ্বারা প্রচলিত এক জরিপে দেখা গেছে, ভারতে এ সমস্যা বর্তমানে কতটা ভয়াবহ।

জরিপে বলা হচ্ছে, ১৩-১৭ বছর ও ১৮-৭৪ বছর বয়সীদের আচরণগত, সুনাম সংক্রান্ত, যৌন ও অনধিকার প্রবেশমূলক চার ক্যাটাগরিতে ১৭ ধরনের অনলাইন ঝুঁকির বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এদের মধ্যে শতকরা ৭৭ জন ভারতীয় অযাচিত যৌন আবেদন, যৌন বার্তা প্রেরণ, প্রতিশোধমূলক পর্ন ও সেক্সটরশন (অশ্লীল ছবি ও ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেল) বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

Advertisement

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এসআর/এমএস