মতামত

জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

 

ঈদুল আজহা আসতে এখনো দেরি। কিন্তু ঈদকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে জালিয়াত চক্র। সাধারণত ঈদের সময় টাকার গতিপ্রবাহ বেড়ে যায়। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করার অপচেষ্টা করে জালিয়াতচক্র। এবারো এ ধরনের একটি চক্রকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

Advertisement

পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর পাকশী থেকে চল্লিশ হাজার টাকার জাল নোটসহ সুজন আলী (১৮) নামে এক কিশোরকে আটক করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের দাশুড়িয়া তেঁতুলতলা থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক সুজন চাঁদপুর জেলা শহরের সিরাজ আলীর ছেলে। তাকে বৃহস্পতিবার পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাবনায় জাল নোট সরবরাহকারীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুজন আলী ঈশ্বরদী থেকে সিএনজিতে করে পাবনা শহরে যাচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিএনজিটি ঈশ্বরদী-পাবনা মহাসড়কের দাশুড়িয়া তেঁতুলতলা নামক স্থানে থামায় পুলিশ। এ সময় সুজনের শরীর তল্লাশি করে ৪০টি এক হাজার টাকার জাল নোট জব্দ ও তাকে আটক করা হয়।

জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র বর্তমানে ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। দেখতে হুবহু আসলের মতো। কিন্তু পুরোটাই নকল। সারাদেশে অনেক জাল টাকা তৈরির কারখানার খবরও ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। জানা যায় টাকা জাল করার প্রতিটি কারখানায় ঘণ্টায় প্রায় দু`লাখ টাকার জাল নোট তৈরি হয়। ব্যাপক হারে এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

Advertisement

এসব অপরাধীদের অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে কিভাবে জালিয়াত চক্রের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় যাতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাহস না পায়।

জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ভাবতে হবে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গী সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে। জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে না পারলে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।

এ পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিং-এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে মেশিনে আসল নকল বোঝার সুযোগ নেই। এই মেশিন ছাড়াও কি দেখে নকল টাকা চেনা যাবে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে গণমাধ্যমে।

এইচআর/এমএস

Advertisement