দেশজুড়ে

স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে যমজ দুই বোন

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে এখনও অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটছে স্কুল পড়ুয়া যমজ দুই বোনের। তবে পরিবারের লোকের সহায়তায় স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে তারা।

Advertisement

যমজ দুই বোন কাজল ও রেখা উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের চরহাজীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তারা চরসুলতানপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম মন্ডলের জমজ দুই মেয়ে।

এদিকে জাগো নিউজে ‘অপহরণ আতঙ্কে যমজ দুই বোন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে বৃহস্পতিবার থেকে ওই বখাটে চক্রকে ধরতে তৎপর হয়ে উঠেছে জেলা পুলিশ, র্যাব ও ডিবি। কিশোরীদের বাবা শহিদুল ইসলাম থানায় মামলা দায়েরের পর এক বখাটেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

দুই কিশোরীর মা পারুল আক্তার বলেন, বখাটেদের ভয়ে আমরা ঠিকমতো বাড়ির কাজকর্মও করতে পারছি না। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

Advertisement

চরহাজিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাদ আবুল কালাম বলেন, স্কুল পরিচালনার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। বখাটেদের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে, এটা প্রত্যাশা করি প্রশাসনের কাছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ওই বখাটেরা প্রায়ই স্কুলের আশে-পাশে অন্যায় কাজ করে থাকে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কারণ স্থানীয় প্রভাবশালী মাতুব্বররা তাদের আশ্রয় দেয়। কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও তাদের পেছনে রয়েছে।

দুই কিশোরীর বাবা শহিদুল ইসলাম মন্ডল বলেন, পুলিশের ভরসা পেয়ে মেয়েদের স্কুলে আমি সঙ্গে করে নিয়ে গেছি। তিনি বলেন, এক বখাটেকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু অন্যদের আটক না করা পর্যন্ত আমাদের দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না।

এদিকে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে চর হাজিগঞ্জ বাজারে অভিযুক্ত মিজানের বাবাকে পাওয়া যায়। তিনি তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মেয়েদেরকে বিরক্ত করায় মিজান উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে গেলে তিনি মেয়ে পক্ষের আক্রমণের শিকার হয়।

Advertisement

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের সনাক্ত করে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করছি। এছাড়া র্যাব ও পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সে যতোই ক্ষমতাশালী হোক না কেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে চাই।

এদিকে ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের।

তিনি বলেন, যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না ছাত্রী উক্ত্যক্তকারীদের।

চরভদ্রাসন থানা পুলিশের ওসি রাম প্রসাদ ভক্ত জানান, নয় জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তৈয়ব খালাসিকে গ্রেফতার করেছি। অন্যদের ধরতে জোড় তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

ফরিদপুর র্যাব ক্যাম্পের অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রইছ উদ্দিন জানান, স্কুলছাত্রীদের উক্ত্যক্তকারী বখাটেদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। প্রশাসন কোনো রকম ছাড় দেবে না তাদের। তাদের আটকে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের বখাটে মিজান (২৫), তামেল (২২), আকমাল (২১), রাজু (২২), রনি (২০), রাশেদ (২১) ইমরান বেপারী (২৩) ও তৈয়ব খালাসী (২৫) কিছুদিন যাবৎ স্কুলছাত্রী দুই যমজ বোন কাজল ও রেখাকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। সম্প্রতি কাজল তার ভাইয়ের মোটরসাইকেলে চড়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটেরা তাকে টেনে-হিচড়ে অপহরণ করার চেষ্টা করে। এ সময় কাজলের ভাই রাকিব হোসেন (২৪) বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে আহত করে বখাটেরা।

এ ঘটনার জের ধরে পরদিন ওই বখাটের দল জমজ দুই বোনের বাড়িতে এসে হামলা চালায়। তারা যমজ দুই বোনের চাচাতো ভাই বাসার মন্ডল (৪২) ও তুষার মন্ডলকে (২৪) হাতুড়ি পেটা করে গুরুতর আহত করে।

এমএএস/পিআর