দেশজুড়ে

উত্তরাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি

রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ফেডারেশনের যৌথ সভা সিরাজগঞ্জ পৌর কনভেশন হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাবনা-বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটে বাস চলাচলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আগামী ১৩ জুলাই থেকে উত্তরাঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ পৌর কনভেনশন হল রুমে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যৌথ সভা শেষে এ ঘোষণা দেন জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাদি আলমাজি জিন্নাহ।

তিনি বলেন, শাহজাদপুর দিয়ে পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার বাস চলাচলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ১৩ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সকল জেলার গাড়ি অন্য সকল জেলায় চলাচলসহ সভায় ৬টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এ সময় শাহজাদপুর উপজেলা বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হয়রানি ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ নৈরাজ্যের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। সভায় পাবনা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলার বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সরাসরি এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন।

Advertisement

এদিকে শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে রাজশাহীগামী এম এস পরিববহন, সাব্বির এন্টার প্রাইজ ও জেনিন সার্ভিসের ৩টি বাসের রুট নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিরসন হয়নি। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে গত মঙ্গলবার (৩ জুলাই) থেকে সিরাজগঞ্জ-শাহজাদপুর-পাবনা, পাবনা-শাহজাদপুর-সিরাজগঞ্জ এবং ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-পাবনা ও পাবনা-সিরাজগঞ্জ-ঢাকা থেকে শাহজাদপুর হয়ে বাস চলাচল সরাসরি বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন যাত্রীরা।

সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাদি আলমাজি জিন্নাহর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল লতিফ মন্ডল, কার্যকরী সভাপতি রফিকুল ইসলাম, বগুড়া বাস সমিতির সভাপতি আরিফুর রহমান মিলন, পাবনা বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেবী ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ট্রাক ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান, রাজশাহী জেলা ট্রাক ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আলী, নাটোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান আলম, পাবনা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ, কাশিনাথপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলম হোসেন, উল্লাপাড়া ট্রাক ও ট্যাংক-লরি শ্রমিক নেতা আহসান উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম লিটন, সাংগঠনিক মনির হোসেন, জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক দুলাল হোসেন দুলু প্রমুখ।

পাবনা জেলা মটর শ্রমিক ইউনিনের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ বলেন বলেন, পুলিশের চেয়ে শাহজাদপুর বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা খারাপ। তাদের চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য ও নির্যাতনের কারণে উত্তরাঞ্চলের বাস মালিক ও শ্রমিকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। দলভিত্তিক গুন্ডবাহিনী দিয়ে তারা গত ৩ দিন থেকে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে। তারা একটি বাসের রুটের কারণে গত মঙ্গলবার রাতে পাবনা থেকে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের দু’টি বাসের গ্লাস ভাঙচুর ও হেলপারদের মারপিটও করেছে। রাজশাহীর নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

কাশিনাথপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলম হোসেন বলেন, পরিবহন সেক্টরের নীতিমালা বহির্ভূত হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা গত ৩ দিন আগে হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেয়। তারা এ ধরনের কাজ প্রায়ই করে থাকে।

Advertisement

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শাহজাদপুর উপজেলা বাস মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক লিয়াকত হোসেন বলেন, শাহজাদপুর থেকে রাজশাহীগামী এম এসপরিবহন ও উল্লাপাড়া থেকে ‘সাব্বির পরিবহনের দুটি বাস চলাচল নিয়ে মুলত এ দ্বন্দ্ব। ৩ মাস হলো শাহজাদপুরে এম এস পরিবহন বাস বন্ধ রাখা হলেও উল্লাপাড়ার সাব্বির পরিবহনের বাসটি বর্তমানে চলছে।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিন আগে সিরাজগঞ্জ জেলার নেতারা শাহজাদপুর থেকে রাজশাহীর দিকে ৪টি বাস চালাবেন বলে আমাদের চিঠি দেন। জেনিন নামের একটি উদ্বোধনী বাস তারা পাঠিয়ে দেন। এম এস পরিবহনের বাসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসন ছাড়া আমরা এসব নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি। এরপর সিরাজগঞ্জ জেলার মালিক-শ্রমিক নেতারাই আগে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। পরে বাধ্য হয়ে আমরা বন্ধ করি।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/জেআইএম