খেলাধুলা

সাকিবদের বাজে পারফরম্যান্স সমর্থকদের আবার ফিরিয়ে এনেছে ক্রিকেটে!

ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী ও প্রথম সারির দলগুলোর সাথে সিরিজ হলে তো কথাই নেই। জিম্বাবুয়ে আফগানিস্তানের মতো নিচু সারির দলের সাথে খেলা নিয়েও আজকাল রাজ্যের হই চই হয়। সর্বোচ্চ আকর্ষণ থাকে। উত্তেজনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়; কিন্তু এবার সাকিব, তামিম, মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিয়ে তার অর্ধেকও নেই। হৈ হুল্লোড়, সাড়া-শব্দ কিছুই টের পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ছিল অস্বাভাবিক নীরব। হাতে গোনা অল্প ক’জন কিছু বিচ্ছিন্ন স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাতে অল্প কিছু কমেন্টসও হয়েছে; কিন্তু সামগ্রিকভাবে অন্য সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচের আগে যে সাড়া পড়ে যেতো তার কিছুই হয়নি।

সত্যি কথা বলতে, বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে সাতটায় ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টসের সময়ও টের পাওয়া যায়নি যে, ৩০ মিনিট পরই বাংলাদেশ খেলতে নামছে। এক কথায় বিশ্বকাপে ‘ব্র্যাকেটবন্দীই’ ছিল বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এ সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগি, ভক্ত-সমর্থকের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল অনেক অনেক কম।

কারণ এক ও অভিন্ন। সবাই কম বেশি মেতে আছেন বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। মর্ত্যেরে এ সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞের আকর্ষণ, মায়ায় মোহাবিষ্ট সবাই। কোটি ভক্তের প্রাণের দল আর্জেন্টিনা আর প্রিয় খেলোয়াড় লিওনেল মেসি নেই বিশ্বকাপে। রাউন্ড অফ সিক্সটিন থেকেই বিদায় নিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন জার্মানিতো গ্রুপের প্রাচীরই টপকাতে পারেনি।

Advertisement

সাজানো-গোছানো ফুটবল খেলা স্পেনও সেরা ষোলোর লড়াইয়ে বাদ। মেসির সাথে পাল্লা দিয়ে যার জনপ্রিয়তা, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালও সেরা আটে যেতে পারেনি। কারো কারো মত, এটা অঘটনের বিশ্বকাপ। ফেবারিট ও সম্ভাব্য বিজয়ীদের আগে-ভাগে বাদ পড়ার বিশ্ব আসর। তা নিয়ে সমর্থক-ভক্ত ও অনুরাগীদের আক্ষেপ-অনুশোচনা এবং হতাশাও আছে। অমন জনপ্রিয় ও দর্শক পছন্দের বেশ কটি শীর্ষ দল বাদ পড়ায় আকর্ষণও খানিকটা কমে গেছে; কিন্তু ওই দল গুলোর বিদায়ের সম্ভাব্য কারণ নিয়ে কথা-বার্তাও অব্যাহত আছে। মেসি-রোনালদোর বিশ্বকাপ শেষ- তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।

অনেক গোছানো ফুটবল মানে নিজেদের মধ্যে সর্বোচ্চ দেয়া-নেয়ার পরও স্পেন নেই সেরা আটে। তা নিয়েও অনেক কথা।এশিয়ার ‘ব্রাজিল’ খ্যাত জাপানের শেষ মুহূর্তে বিদায়ের করুণ রাগিনী বাজছে এখনো অনেকের মনে। এর বাইরে যে আট দল ব্রাজিল, উরুগুয়ে, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, স্বাগতিক রাশিয়া, সুইডেন ও ক্রোয়েশিয়া টিকে আছে, তাদের নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।

মোট কথা, একাধিক শীর্ষ দলের বিদায়ের পরও বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায়নি। তার আবেদন ফুরোয়নি। আকর্ষণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাও শেষ হয়ে যায়নি। বরং দর্শক, সমর্থক ও ভক্তরা পেয়েছেন এক নতুন চিন্তার খোরাক। সবার মাঝে এক নতুন ভাবনার উন্মেষ ঘটেছে। অনেকেই ভাবছেন, ফেবারিটদের পিছনে ফেলে এবার না আবার কোন নতুন দল চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়!

আবার এমন কথাও শোনা যাচ্ছে একবার মাত্রকাপ জেতা ইউরোপের কোন ফুটবল শক্তি না আবার বিশ্বসেরার মুকুট মাথায় পরে? আর এক দল আছেন ব্রাজিলের পক্ষে। তাদের কথা, ‘অঘটনের আর বড় দলের আগে-ভাগে বিদায়ের আসরে শেষ হাসি হাসবে ব্রাজিলই।’

Advertisement

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত না পেলে, জিকো, রোমারিও, রোনালদোদের উত্তরসূরিরা না আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়! শেষ পর্যন্ত কি ঘটবে, তার উত্তর সময়ই বলে দেবে। বুধবার রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট শুরুর আগেও বাংলাদেশের খেলাপ্রেমীরাও এমন চিন্তায় বিভোর ছিলেন।

কিন্তু মাঠে টাইগারদের যারপরনাই বাজে ব্যাটিং সবাইকে আবার ক্রিকেট মাঠে ফিরিয়ে এনেছে। আবার সবার চোখ ক্রিকেট মাঠে। ‘এই না বললেন, সবাই বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মেতে আছে। তাদের চোখ মস্কো, কাজান কিংবা সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে। তাহলে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসা কি করে?’

কেউ কেউ হয়ত এমন প্রশ্ন করবেন। তা করতেই পারেন। তাদের জন্য বলা, মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো- খুব ভালো কিছুর প্রতি আকৃষ্ঠ হওয়া। প্রশংসা-স্তুতি গাওয়া। আর বেশি খারাপকে ধিক্কার কিংবা নিন্দা জানানো। তা নিয়ে মাথা ঘামানো।

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন সাকিব বাহিনীর পারফরমেন্সটা আসলে বেশি খারাপ হয়েছে। টেস্টে টাইগাররা এদিন সবচেয়ে কম ৪৩ রানে অলআউট হয়েছে। এমন হতশ্রী ও যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ের সাথে যোগ হয়েছে দূর্বল, কমজোরি, ধারহীন-নির্বিষ বোলিং আর দুর্বল ফিল্ডিং এবং ক্যাচ ফেলার মহোৎসব। খারাপের মাত্রাটা খুব বেশি বাজে হয়েছে বলেই সাধারণ মানুষের অনুভূতিটাও হয়েছে নেতিবাচক। মাঝারী পারফরমেন্স মানে বাংলাদেশ অন্তত দুশোর ঘরে গেলেও পাবিলক প্রতিক্রিয়া এত নেগেটিভ হতো না; কিন্তু ৪৩ রানে অলআউট হতে দেখে সবার মন খারাপ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবার সরব। নানা রকম স্ট্যাটাসে ভরে গেছে। গোটা দেশের যে খেলাপ্রেমীরা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে মেতে ছিলেন, তাদের বড় অংশ আবার ক্রিকেটে ফিরে এসেছেন। ভক্ত-সমর্থকরা হতভম্ব! বিমূঢ়। প্রত্যেকের একটাই কথা, ‘খারাপ খেলারও একটা মাত্রা আছে। তাই বলে ৪৩ রানে অলআউট হতে হবে? এর চেয়ে খারাপ ব্যাটিং আর কি হতে পারে?’

এআরবি/আইএইচএস/পিআর