আইন-আদালত

দুই মামলায় খালেদার জামিন নামঞ্জুর

ভুয়া জন্মদিন পালন ও মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে মানহানির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে ঢাকা মহানগর হাকিম আহসান হাবীব এ আদেশ দেন।

Advertisement

গত ২১ জুন খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও জিয়া উদ্দিন জিয়া তার জামিনের আবেদন করেন। জামিন শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) দিন ধার্য করেন আদালত।

মুক্তিযুদ্ধকে ‘কলঙ্কিত’ করার অভিযোগে দায়ের মামলায় বলা হয়, ‘২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি (খালেদা জিয়া) রাজাকার-আলবদর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাদের বাড়ি ও গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দেন।’

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। আদালত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

Advertisement

২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক মশিউর রহমান (তদন্ত) অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম নুর নবী।

অন্যদিকে ভুয়া জন্মদিন পালনের মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ম্যাট্রিক পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট। তার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট।

বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবসে (১৫ আগস্ট) আনন্দ-উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। শুধু বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য তিনি জন্মদিন পালন করেন।

২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে খালেদাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। পরে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। রায়ের পরই নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয় খালেদাকে। ওই কারাগারটি বর্তমানে বিশেষ কারাগারে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই মামলায় জামিন পেলেও অন্য মামলায় তার জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় তাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।

জেএ/আরএস/আরআইপি