জাতীয়

‘ক্যারি অন’ আন্দোলনের সমাধান চায় সরকার

‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন বন্ধের উপায় খুঁজছে সরকার। এমবিবিএস নতুন কোর্সের কারিকুলামে এ পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বুধবার দুপুর ২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।বৈঠকে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা শাখা, সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন (সিএমই) এর শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ফ্যাকাল্টির ডিন ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এমন একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজের কাছে এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, তারা সকলেই উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু সমাধান চান। দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে যা মঙ্গলজনক হবে সে ব্যাপারই তারা সম্মিলিতভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা গত কিছুদিন যাবত এমবিবিএস নতুন কোর্স কারিকুলামে পুরনো সিলেবাসের মতো ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। রাজপথে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল করছে।সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সমস্যা সমাধানের গ্রহণযোগ্য উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খানের সঙ্গে দেখা করে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি বহাল রাখার দাবি জানালে তিনি তাদের বলেন, কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নের দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষের নয়, বিএমডিসির। তিনি শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেন।এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যক্ষ বলেন, কোর্স কারিকুলামের জন্য কোনো মেডিকেল শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের একটি দিনও বিফলে যাক তা তিনি চান না।‘ক্যারি অন’ পদ্ধতিটি আসলে কী এ সম্পর্কে চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এমবিবিএস কোর্সের কোর্স কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে কয়েক বছর পর পর রিভিউ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়।২০০২ সালের পর সর্বশেষ ২০১২ সালে নতুন কোর্স কারিকুলাম প্রণীত হয়। পুরোনো কারিকুলামে দেড় বছর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে এনাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াশুনা শেষে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেন। পরীক্ষায় পাস করে তৃতীয় বর্ষে উঠে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে মোট ৫টি বিষয় ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতেন।পুরোনো কারিকুলামে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় কেউ ফেল করলেও সে তৃতীয় বর্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস ও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতেন। পরবর্তীতে যে বিষয়ে ফেল করেছে সে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতো। এ পদ্ধতিটিই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।কিন্তু নতুন কারিকুলামে ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সে সুযোগ রাখা হয়নি। যারা ফেল করবে তারা সহপাঠীদের সাথে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবে না। ক্লাস চালিয়ে গেলেও সেটি তার শিক্ষাকাল হিসেবে গণ্য হবে না।২০১২ সালে যারা ভর্তি হয়েছিল ১৮ মাস পড়াশুনার পর সম্প্রতি তারা প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।পরীক্ষায় শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করে। যারা ফেল করেছে নতুন কারিকুলাম অনুসারে তারা ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবেন না। তাই তারা পুরোনো ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছে, শারীরিক অসুস্থতা, পরিবারে বাবা, মা বা ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যুজনিত বা অন্য কোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী ফেল করতেই পারে। কিন্তু ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি চালু থাকার ফলে তারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক নানা সমস্যা কাটিয়ে উঠে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেতো। কিন্তু নতুন কারিকুলামে সে  সুযোগ রাখা হয়নি। এতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের শিক্ষাজীবন দারুণভাবে ব্যাহত হবে।ফলে হতাশ হয়ে কেউ কেউ মাদকাসক্ত বা বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। এ কারণে তারা ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানান তিনি।এ ব্যাপারে বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু শফি আহমেদ আমিনের কাছে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চূড়ান্তভাবে কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নের দায়িত্ব বিএমডিসির হলেও তারা এককভাবে এটি তৈরি করেনি।সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে খসড়া কারিকুলাম তৈরি হয়। পরে তা সেন্টার ফর মেডিকেল এডুকেশন শাখার মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিএমডিসিতে পাঠানো হয়।বিএমডিসির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রচলিত রীতিনীতি অনুসারে কোর্স কারিকুলামের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য পথ বেরিয়ে আসবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম  ইকবাল আর্সলান জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার উন্নয়নে সার্বিকভাবে যা মঙ্গলজনক সে উদ্যোগই গ্রহণ করা হবে। বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এমইউ/এসএইচএস/একে/বিএ

Advertisement