বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইসলামিক বন্ড ‘সুকুক’ খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু দেশে আটটি পূর্ণ ইসলামিক ব্যাংক এবং ১৭ ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো থাকলেও সুকুক এখনো চালু হয়নি। তবে ভিন্ন নামে ইসলামিক বন্ড চালু থাকলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না গ্রাহকরা।
Advertisement
ইসলামিক বন্ড সুকুক সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরবে। দেশটির মোট শেয়ারের প্রায় ৩৯ শতাংশ সুকুক বন্ডের দখলে। দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। দেশটির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে সুকুক বন্ড।
২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের ইসলামিক বন্ড সুকুকের প্রায় ৩৩ শতাংশ মালয়েশিয়ার শেয়ার। এরপরে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কাতার, ওমান, তুরস্ক, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, হংকং, নাইজেরিয়া, ব্রুনাই ও জর্ডান। বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে। মাত্র দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ ইসলামিক বন্ডের শেয়ার আছে বাংলাদেশের। আবার বৃহৎ মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের অধিকাংশ পরিমাপকে পিছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
বুধবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রডাক্ট ডাইভারসিফিকেশন অব ইসলামিক ব্যাংকস : প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
Advertisement
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. আলমগীর। গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মহব্বত হোসেন, বিআইবিএমের প্রভাষক মো. আব্দুল হালিম এবং ইসলামিক ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) পরিচালক (গবেষণা) ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মো. মিজানুর রহমান।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ইসলামি ব্যাংকিং এখন দেশের মূল ধারার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে আটটি ইসলামিক ব্যাংক সেবা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের ১৭টি উইন্ডো ইসলামিক ব্যাংকিং সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংকিং প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে যাতে আগামীতে টেকসই আর্থিক ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বে সুকুক বন্ড খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু দেশে পিছিয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দেশ ঘুরে কীভাবে চালু করলে এ বন্ডটি জনপ্রিয় হবে তা খতিয়ে দেখছে। তিনি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকে নতুন উদ্যোক্ততা সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগের ওপর জোর দেন।
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ইসলামী ব্যাংকংগুলো ব্যাংকিং খাতের মোট শেয়ারের ২২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে এ বড় শেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যাপ্ত প্রডাক্ট নেই। ছোট ছোট ঋণ দেয়ার জন্য সেই ধরনের বহুমুখী প্রডাক্ট তৈরির ওপর জোর দেন। এতে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি কমবে।
Advertisement
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকি কমাতে প্রডাক্টের বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। বড় ধরনের ঋণের সঙ্গে ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকের ঝুঁকি কমানোর ওপর তিনি জোর দেন।
তিনি বলেন, তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুকুকের প্রবর্তন জরুরি।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. হায়দার আলী মিঞা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি প্রমুখ।
এমইউএইচ/এসআই/এএইচ/জেআইএম