যুগে যুগে অনেক বড় বড় আল্লাহদ্রোহী নাফরমানের আগমন ঘটেছে। এমন কোনো অন্যায় ও মারাত্মক নাফরমানি নেই যা তারা করেনি। ফেরাউন, নমরূদ, সাদ্দাদ, কারুনসহ বর্তমান সময়েও অনেক বড় বড় ফেতনাবাজ রয়েছে যারা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত। যারা মানুষের ওপর চরম জুলুম অত্যাচার করছে।
Advertisement
অত্যাচারীদের দ্বারা নিজেদের জীবন বিসর্জনসহ যারা চমর নির্যাতন ভোগ করার পরও আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে অটল ও অবিচল রয়েছে এবং ধৈর্যধারণ করেছে তাদের জন্যই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা।
চরম বিপদের সময় আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা রাখা অনেক কঠিক কাজ। যাদের প্রতি আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ রয়েছে তার আনুগত্যে অটল ও অবিচল থাকা শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই সম্ভব। আর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সাহায্য লাভে এভাবে দোয়া করে-
رَبَّنا أَفرِغ عَلَينا صَبرًا وَتَوَفَّنا مُسلِمينَ
Advertisement
‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাওঁ ওয়া তাওয়াফফানা মুসলিমিন। অর্থাৎ হে আমাদের রব! আমাদের সবর (ধৈর্য) দান করো এবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও। (সুরা আল-আ`রাফ : আয়াত ১২৬)
আগের যুগেও যারা তাওহিদের অনুসারি ছিল তারা এভাবেই আল্লাহ তাআলার কাছে আনুগত্যের ওপর অটল থাকতে আশ্রয় চাইতেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতেন।
আরও পড়ুন > যে ৩ ব্যক্তি কেয়ামতের দিন বিশেষ নেয়ামত লাভ করবে
উল্লেখিত দোয়ার প্রেক্ষাপটহজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন তাওহিদ বা একত্ববাদের আনুগত্যের দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন তখন অত্যাচারী ফেরাউন তাকে বললেন, তুমি যদি সত্য নবি হও তবে তোমার মুজিজা দেখাও।হজরত মুসা আলাহিস সালাম তাঁর হাতের লাঠি মাটিতে ছেড়ে দিলে তা বিরাট অজগর সাপে পরিণত হয়ে ফেরাউনের দিকে ধাবিত হয়।ফেরাউন ভয়ে তার আসন থেকে লাফিয়ে পড়ে বলতে লাগলো- হে মুসা! (আলাইহিস সালাম) তোমার সাপকে টেনে ধর। আমি তোমার ওপর ঈমান আনলাম।হজরত মুসা আলাইহি সালাম তার লাঠি ধরে অজগরকে থামালেন।
Advertisement
অতঃপর ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে বললো, হে মুসা! তুমি কে আমি কি তা বলব?হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘হ্যাঁ’, বলুন।তখন সে বলল, তুমিতো সেই ব্যক্তি যে আমার কাছে লালিত-পালিত হয়ে বড় হয়েছ।অতঃপর ফেরাউন হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে তার সম্রাজ্যের সব জাদুকরকে সংবাদ দিলেন।
তাফসিরের সূত্র মতে,ফেরাউন ৭০ হাজার জাদুকরকে সংবাদ দিয়েছিলেন। সে সংবাদে ১৫ হাজার মতান্তরে ৩০ হাজার জাদুকর উপস্থিত হয়েছিল। প্রত্যেকের সঙ্গে ছিল দঁড়ি এবং লাঠি।জাদুকররা হজরত মুসা এবং তাঁর ভাই হারুন আলাইহিস সালামকে নজরবন্দি করে দঁড়ি এবং লাঠি মাঠে ফেলায় সব দঁড়ি এবং লাঠি সাপে পরিণত হলো। সাধারণ মানুষ এবং হজরত মুসা ও তার ভাই ভীত হলেন।আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে বললেন, ‘হে মুসা! আপনি ভয় করবেন না। আপনি জয় লাভ করবেন। আপনি হাতের লাঠিটি মাটিতে ফেলে দিন।হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন তার হাতের লাঠিটি মাটিতে ফেললেন। তাঁর লাঠি বিশাল বড় এক সাপে পরিণত হয়ে মাঠে কিলবিল করা সব সাপকে খেয়ে ফেলল।
আরও পড়ুন > আরশের ছায়ায় ধন্য যারা!
জাদুকরদের সত্যতা ঘোষণা ও ফলাফলজাদুকররা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করল যে, তিনি আল্লাহর সত্য নবি। তারা বললো-‘হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যদি জাদুকর হতেন। তবে আমাদের সঙ্গে পারতেন না। তারা তখনই সেখানে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এবং আল্লাহ ও হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর ঈমান আনলেন।’এ অবস্থা দেখে ফেরাউন জাদুকরদের বললেন- তোমরা আমার অনুমতি ব্যতিত ঈমান আনলে। পাশাপাশি তাদেরকে বিভিন্ন শাস্তির কথা বলায়- প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নিজের ঈমানকে হেফাজতের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে উল্লেখিত দোয়া পড়েলেন।
সুতরাং মানুষের উচিত চরম অত্যাচার নির্যাতন ও বিপদের সময় মহান আল্লাহর কাছে তাঁরই শেখানো ভাষায় দোয়া করা। নিজেদের ঈমানকে হেফাজত করা। আল্লাহর আনুগত্যে অটল ও অবিচল থাকা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশিত ঘোষণা ও দোয়া তার কাছে সাহায্য লাভের তাওফিক দান করুন। চরম বিপদ ও মুসিবতে আল্লাহর আনুগত্যে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি