সিলেটের বিশ্বনাথে নিহত দিনমজুর বৃদ্ধ আব্দুল মনাফের লাশ কবর থেকে উধাও হয়েছে গেছে। আদালতের নির্দেশে পুনরায় ময়নাতদন্ত করতে নিহত মনাফের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে গিয়ে কবরে লাশের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিশ্বনাথ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুহেল মাহমূদ ও সিলেটের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. হাবিবুর রহমানের উপস্থিতিতে নিহত মনাফের কবর খোড়া হয়। এসময় কবরের ভেতরে একটি কাপড় ও পলিথিন, পলিথিনের সুতলি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। এসময় এলাকার কয়েক শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।জানা গেছে, উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আব্দুল মনাফ (৫৫) গত ১৬ মে বিকেল থেকে ‘নিখোঁজ’ হন। ১৮ মে সন্ধ্যায় বাদীর বসত ঘরের সম্মুখের গোয়াল ঘরে র্দুগন্ধ পেয়ে ‘নিখোঁজ’ আব্দুল মনাফের স্ত্রী সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার স্বামীর গলায় দঁড়ি লাগানো হাটু ভাঁজ করা অবস্থায় বেড়ার সাথে টেস দেওয়া ও ১টি কাটের তক্তা দিয়ে আড়াল করে রাখা। তখন তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন এবং খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে লাশ উদ্ধার করে। পরদিন আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে গ্রামবাসী হরিপুর গ্রামের অভিযুক্ত উস্তার আলী ও তার ছেলে মিন্টু মিয়াকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেন। এঘটনায় নিহতের ভাই থানায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি দরখাস্ত করেন। যা বিশ্বনাথ থানায় অপমৃত্যু জিডি (জিডি নং-০৭) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর নিহতের সুরতহাল রির্পোট ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এর ভিত্তিতে আব্দুল মনাফ আত্মহত্যা করেছেন মর্মে থানা পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর আব্দুল মনাফকে হত্যার অভিযোগে তার ভাই আব্দুল হাশিম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৪/৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গত ২৫ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩ এ একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, হরিপুর গ্রামের উস্তার আলীর ছেলে টিটু মিয়া (২৫), তার বাবা উস্তার আলী (৫৫), ভাই মিন্টু মিয়া (২২), লুৎফুর (৩২) ও একই গ্রামের মৃত মজর আলীর ছেলে কবিরুল (৩৫)।দাফনের সময় নিহতের শরীরে কোন ধরনের ময়নাতদন্তের প্রমাণ পরিলক্ষিত হয় নাই। পরবর্তীতে তিনিসহ এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিম মনাফের লাশ পুনরায় ময়নাতদন্ত করা জন্য গত ১৭ জুন আদেশ প্রদান করেন সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-২ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। একই সাথে জেলহাজতে আটক অভিযুক্ত বাবা ও ছেলেকে পুনরায় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল না হওয়া পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে জামিন প্রদান করেন আদালত। ৫ জুলাই এর মধ্যেও ময়নাতদন্ত না হওয়ায় গত ২৬ জুলাই পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ওই আদেশে আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে পুনরায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দেওয়া হলে মঙ্গলবার দুপুরে নিহত মনাফের লাশ উত্তোলনের জন্য কবর খোড়া হয়। কিন্তু লাশ পাওয়া যায়নি।এ ব্যাপারে নিহত মনাফের স্বজনদের অভিযোগ, আদালত লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে অভিযুক্তরা কবর থেকে আব্দুল মনাফের লাশ চুরি করেছে।ছামির মাহমুদ/ এমএএস/এমআরআই
Advertisement