স্বাস্থ্য

বিএসএমএমইউর জেনারেল ইমার্জেন্সি চালু হবে কবে?

দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ (বিএসএমএমইউ) এর জেনারেল ইমার্জেন্সি বিভাগটি চালু হবে কবে? গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল ইর্মাজেন্সি (সাধারণ জরুরি) বিভাগ চালু হচ্ছে ও হবে- এমন কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তা আলোর মুখ কবে দেখবে তা এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। 

Advertisement

গতকাল (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) জন্য ৪২৮ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার টাকার বাজেট পেশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য় ও কোষাধ্যক্ষের কাছে আবারও জানতে চান, জেনারেল ইমার্জেন্সি কবে চালু হবে? 

উত্তরে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আলী আসগর মোড়ল বলেন, আগে অনেকবার বলেছি কিন্তু চালু হয়নি। এবার বিশ্বাস করেন খুব শিগগিরই তা চালু হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে অবশ্যই জেনারেল ইমার্জেন্সি চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকলেও টেন্ডারজনিত জটিলতার কারণে এটি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করতে না পারায় ঝুলে আছে। খুব শিগগিরই মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার জন্য রি-টেন্ডার আহ্বান করা হবে। 

Advertisement

১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল সাবেক আইপিজিএমআর বিএসএমএমইউ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১টি বিভাগে ৪৫৯ জন শিক্ষক, ৫৩ জন মেডিকেল কনসালটেন্ট ও ৫৬৯ জন মেডিকেল অফিসার, ৫৪ জন গবেষণা সহকারী, ৩৫৯ জন অন্যান্য কর্মকর্তা, এক হাজার ২৩১ জন নার্স, ৭৬৬ জন কর্মচারীসহ মোট তিন হাজার ৪৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১টি বিভাগে ৪২টি অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ৯২টি উচ্চ শিক্ষার কোর্সে তিন হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যায়নরত। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৯০৪ শয্যার হাসপাতালে রোগীর ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এছাড়া বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর সার্ভিসে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নেন। কিন্তু দুই যুগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ জরুরি বিভাগটি চালু হয়নি। তবে ইতোমধ্যে হৃদরোগ, অর্থপেডিকসসহ কয়েকটি জরুরি বিভাগ বিছিন্নভাবে চালু হয়েছে। চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে জড়িত এ প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু থাকা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সাধারণ জরুরি বিভাগটি ঢেলে সাজানোর জন্য ২৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের নানা ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের আমলে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি ক্রয় কমিটিও গঠন করা হয়। বর্তমান প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতারও ওই কমিটির সদস্য। জানা গেছে, দরপত্রের নিয়মনীতি মেনে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। 

ক্রয় কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সম্প্রতি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি বেশকিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। ক্রয় কমিটি যন্ত্রপাতি গ্রহণ করতে গিয়ে দেখে, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হয়নি। ফলে তারা যন্ত্রপাতি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। আরও জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি যন্ত্রপাতিগুলো গ্রহণ করার জন্য অদৃশ্য চাপ প্রয়োগ করলেও ক্রয় কমিটি সাফ জানিয়ে দেয়, তারা নিয়মের বাইরে কিছুই করবেন না। ক্রয় কমিটির সদস্যদের সকলে একমত হয়ে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক ধরনের যন্ত্রপাতির কেনার কথা বলে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি গছিয়ে দেয়া হবে- তা কখনও মেনে নেয়া হবে না। এ অন্যায় কাজের দায় আমিসহ ক্রয় কমিটির কোনো সদস্যই মেনে নেবেন না।

Advertisement

এমইউ/এমএআর/পিআর