আন্তর্জাতিক

গুহায় আটকা শিশুদের প্রশ্ন : আমরা কী বাইরে বের হতে পারবো?

নিখোঁজের ১০দিন পর থাইল্যান্ডের জলমগ্ন গুহায় কোচসহ ১২ কিশোর ফুটবলারের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখনো তাদের সেখানে এক উঁচু টিলায় আটকে থাকতে হচ্ছে। ব্রিটিশ ও থাই ডুবুরিদের সমন্বয়ে গঠিত উদ্ধারকারী একটি দল দীর্ঘ পানিপথ অতিক্রমের পর গুহার একটি কোণায় উঁচু টিলায় কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের সন্ধান পায় সোমবার।

Advertisement

এই ডুবুরি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটিশ দুই নাগরিক। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে ব্রিটিশ দুই নাগরিক সামরিক কর্মকর্তাও নন এমনকি পেশাদার ডুবুরি হিসেবেও তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ব্রিটেন থেকে এসে উদ্ধারকারী দলে যোগ দিয়েছেন তারা। তাদের ১০ দিনের চেষ্টার পর অবশেষে শিশুদের উদ্ধারে আশার আলো দেখছে থাই কর্তৃপক্ষ।

চিয়াং রাই প্রদেশের থ্যাম লুয়াং গুহায় নয়দিনের যাত্রা শেষে ডুবুরিরা যখন টর্চ লাইটের আলো গুহার উঁচু ঢিবির ওপর ফেলেন তখন শিশুদের বিমর্ষ মুখ দেখা যায়। শিশুদের কয়েকজনকে শুয়ে ও বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় শিশুরা জানতে চায়, তোমরা কোথায় থেকে এসেছো।

আরও পড়ুন : গুহায় আটকে পড়া কিশোরদের সন্ধান, উদ্ধারে সময় লাগবে কয়েক মাস

Advertisement

ব্রিটিশ কেইভ রেসকিউ কাউন্সিলের (বিসিআরসি) দুই সদস্য থাই জলমগ্ন গুহায় আটকে পড়া শিশুদের উদ্ধারে গঠিত তিন সদস্যের দলে রয়েছেন। ওই দুই ব্রিটিশ হলেন জন ভোলানথেন (৪৭) ও রিক স্ট্যানটন (৫৬)। নিখোঁজ শিশুদের যখন খুঁজে পাওয়া যায় তখন তাদের সঙ্গে ছিল থাই নেভি সিলের একটি দল।

শিশুদের নাগালে যাওয়ার পর তাদের ভিডিও ধারণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষুধার্ত ও কর্দমাক্ত শিশুদের দিকে টর্চ লাইটের আলো ফেলে ব্রিটিশ এক উদ্ধারকারী প্রশ্ন করেন, তোমরা কতজন অাছো? ১৩ জন?...অসাধারণ। নাটকীয় এই ভিডিও ফুটেজে শিশুদের উদ্ধারের বিস্ময়কর পথ তৈরির আশা জাগিয়েছে।

মঙ্গলবার থাই নেভি সিলের ফেসবুক পেইজে গুহার জলমগ্ন টিলায় বিমর্ষ-দুর্বল শিশুদের সঙ্গে উদ্ধারকারী দলের কথোপকথনের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এই ভিডিওটি প্রায় ২ কোটিবার দেখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিওটি।

শিশুদের সন্ধান পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্বজনরা আনন্দ-উল্লাস করেন। ভিডিওটির শুরু হয়েছে শিশুদের কণ্ঠে উদ্ধারকারীদের উদ্দেশে বলা ‘তোমাদের ধন্যবাদ’ শব্দ দুটি দিয়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, শিশুরা ঠান্ডা নিবারণের জন্য গায়ের টি-শার্ট টেনে হাঁটু ঢাকার চেষ্টা করছেন। দীর্ঘ ৯ দিন ধরে অনাহারে থাকা শিশুদের ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেখা গেলেও তাদের কণ্ঠ ছিল স্পষ্ট।

Advertisement

আরও পড়ুন : নাজিব রাজাক গ্রেফতার

আমরা কী বাইরে বের হতে পারবো, উদ্ধারকারীদের কাছে জানতে চায় এক শিশু। তখন উদ্ধারকারীদের একজন বলেন, ‘না, না আজ নয়...এখানে আমরা দু'জন, তোমাদের ডুব দিতে হবে... আমরা আসছি, ঠিক আছে। অনেক, অনেক মানুষ অাসছে, আমরা দুজন প্রথম এসেছি...অনেক মানুষ আসছে।’

১০ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শিশুদের দিকে আঙুল দেখিয়ে উদ্ধারকারী একজন ডুবুরি বলেন, ‘তোমরা খুবই শক্তিশালী।’ এসময় শিশুদের একজন বলেন, আমি খুব খুশি। তখন ডুবুরি বলেন, আমরাও খুশি। পরিস্থিতি গুরুতর হলেও সৌজন্যতাবোধ দেখিয়ে ওই শিশু বলেন, ‘তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

থাইল্যান্ডের উইল্ড বোর ফুটবল দলের সদস্য গুহায় আটকা এই শিশুরা। তাদের সন্ধান পাওয়ার পর দেশটিতে বইছে আনন্দের বন্যা। তবে বন্যায় পুরো গুহায় প্লাবিত হওয়ায় শিশুদের উদ্ধারে তিন থেকে চারমাস সময় লাগতে পারে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ দুই ডুবুরি সবার আগে উঁচু টিলার কাছে পৌঁছালেও সেখানে ফুটবল দলের শিশুদের সঙ্গে কে কথা বলেছেন সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হয়নি এই ব্রিটিশ ডুবুরিরা। তবে ভোলান্থেন বলেছেন, আমরা একটি কাজ পেয়েছি; যা সফল করতে হবে।

মঙ্গলবার থাই শিশুদের সন্ধান পাওয়ার এই খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের হ্যাশট্যাগের ট্রেন্ডে পরিণত হয়। হ্যাশট্যাগে লেখা হয়, ‘বাঁচল ১৩টি জীবন।’ থাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র উইমোনরাত ওয়ানপেন বলেন, ‘ভিডিও দেখে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানা কঠিন।

‘সংকটের কয়েকদিন পরও তারা ভালো রয়েছে...তবে তারা মানসিক ট্রমায় ভুগছে কি-না সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সূত্র : এএফপি, চ্যানেল নিউজ এশিয়া, রয়টার্স।

এসআইএস/পিআর