আলাদিনের চেরাগের মতো শেয়ারবাজারের মাধ্যমেও রাতারাতি বড় লোক হওয়া যায়, সেই কল্পিত কথাই যেন সত্যি করে দেয়ার ব্রত নিয়েছে বিডি অটোকার। এক মাসের মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি!
Advertisement
প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ার বিষয়ে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের বার বার সতর্ক করা হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে বিডি অটোকারের শেয়ারের দাম।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৮ মে বিডি অটোকারের শেয়ারের দাম ছিল ১০৯ টাকা। যা টানা বেড়ে ২ জুলাই দাঁড়ায় ৩৯৯ টাকা। অর্থাৎ এক মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৯০ টাকা।
অন্যভাবে বললে এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৬ গুণ। এ হিসাবে ২৮ মে আগে যে বিনিয়োগকারীর কাছে বিডি অটোকারের ১০ লাখ টাকার শেয়ার ছিল, সেই শেয়ারের দাম এখন ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ১০ লাখ টাকা এক মাস খাটিয়েই লাভ পাওয়া যাচ্ছে ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগ!
Advertisement
বিডি অটোকারের শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে গত এক মাসে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের ৪ বার সতর্ক করে বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এ পরিস্থিতে মঙ্গলবার আবারও ডিএসইতে সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিএসই জানিয়েছে, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে ২ জুন বিডি অটোকার কর্তৃপক্ষকে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ বিষেয়ে তাদের কাছে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই। এর আগের তিনবারের নোটিশেও একই উত্তর পাঠায় প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বিডি অটোকারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৫১২টি। প্রতিটি শেয়ারের ফেস ভ্যালু ১০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে বর্তমানে ৩৮ দশমিক ২৫ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ শেয়ার।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প মূলধনী কোম্পানি হওয়ার কারণেই বিডি অটোকারের শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এর পিছনে বিশেষ কারসাজি চক্র থাকতে পারে। এ চক্রে বড় বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি কোম্পানির কর্মকর্তাদেরও হাত থাকতে পারে। বিষয়টি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) খতিয়ে দেখা উচিত।
এদিকে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও কোম্পানিটির লভ্যাংশের চিত্র খুব একটা ভাল নয়। ফলে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটি ক্যাটাগিরির দিক থেকে দ্বিতীয় সারির তালিকায় বা ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে।
ডিএসই বিডি অটোকারে লভ্যাংশ নিয়ে ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের তথ্য প্রকাশ করেছে। এ তথ্যে দেখা যায় কোনো বছরই কোম্পানিটি ৫ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয়নি এবং কোনো নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। এর মধ্যে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কোম্পানিটি কোন লভ্যাংশই দেয়নি।
লভ্যাংশ দেয়া বছরগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালে ৩ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৩ শতাংশ, ২০১২ সালে ২ শতাংশ এবং ২০১১ ও ২০১০ সালে ৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিয়েছে কোম্পানিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে কারসাজি চক্র রয়েছে। এ চক্র কিছু শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়াচ্ছে। বিএসইসির উচিৎ এগুলো খতিয়ে দেখা।
ডিএসইর এক পরিচালক বলেন, বিডি অটোকারের পরিশোধিত মূলধন খুবই কম। যে কারণে কোম্পানিটির শেয়ার দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। পরিশোধিত মূলধন কম হওয়ার কারণে কয়েকজন বিনিয়োগকারী মিলে সহজেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমান শেয়ারবাজারে সেটাই ঘটছে। এই চক্রের সঙ্গে কোম্পানির কেউ জড়িত থাকলেও থাকতে পারে। বিএসইসির উচিৎ কেন কোম্পানিটির শেয়ার দাম এভাবে বাড়ছে তা দ্রুত তদন্ত করা।
এমএএস/এমএমজেড/আরআইপি