থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবলাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সবাই বেঁচে আছে এবং নিরাপদে আছে। উদ্ধারকারীরা এখন তাদের বের করে আনার চেষ্টা করছেন। গত ২৩ জুন চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং নামের একটি গুহায় প্রবেশের পর নিখোঁজ হয় ফুটবল টিমের সদস্য ও তাদের কোচ। খবর বিবিসি।
Advertisement
কিন্তু তাদের সবাইকে জীবিত অবস্থায় নয়দিন পর পাওয়া গেলেও এখন তাদের সবাইকে গুহার ভিতর থেকে বাইরে বের করে আনাটা আরেকটা চ্যালেঞ্জ। তবে দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের গুহা থেকে বের করতে কমপক্ষে চারমাস সময় লাগবে। এ সময় তাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে এবং পানি থেকে বের হয়ে আসার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কারণ, তাদের পানির নিচে দিয়ে বের করে আনতে হবে।
১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহাটি থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা। কম প্রশস্ত আর অনেকগুলো প্রকোষ্ঠ থাকায় গুহার ভেতর চলাচল করা কঠিন। ২৩ জুন একটি প্রশিক্ষণ পর্বের পর ওই ১৩ জন গুহার ভেতর প্রবেশ করে। এরপর ভারী বর্ষণ আর কাদার কারণে থাম লুয়াংয়ের প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যায়। ভেতরে আটকা পড়ে তারা। উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই গুহার প্রবেশমুখে ওই কিশোরদের বাইসাইকেল খুঁজে পাওয়া যায়।
গুহার ভেতরে পাওয়া যায় তাদের হাত ও পায়ের ছাপ। এরপর থেকে ওই কিশোরদের সঙ্গে পুরো থাইল্যান্ডই যেন গুহাটির ভেতর আটকা পড়ে। দেশটির নৌবাহিনীসহ উদ্ধার অভিযানে যোগ দেন যুক্তরাজ্য থেকে যাওয়া ডুবুরিরাও।
Advertisement
অক্সিজেনের ঘাটতি যেন না হয়, সে জন্য গুহায় প্রবেশ করানো হয় কয়েকশ অক্সিজেন ট্যাংক। ভেতরেই তৈরি করা হয় একটি বেস ক্যাম্প। প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়াসহ নানাভাবে নিখোঁজ খুদে ফুটবলারদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু ভারী বর্ষণ উদ্ধার অভিযানকেও ব্যাহত করছিল। প্রবল বৃষ্টিপাতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হতে থাকে তখন পানি তোলার পাম্প বসানো হয়, রোবট ব্যবহার করা হয়। গুহার ঢোকার প্রধান প্রবেশ পথটি বৃষ্টির কারণে একেবারে প্রবেশের অযোগ্য হয়ে পরে।
এরপর খোঁজা শুরু হয় একটা চিমনির। গুহার উত্তর দিকে একটা প্রাকৃতিক চিমনি আবিষ্কার করা হয়। ২৯শে জুন গুহার ভিতরে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। উদ্ধার-কর্মীদের এটাই সুযোগ করে দেয় ভিতরে ঢোকার, আশা বাড়তে থাকে।
সোমবার রাতে খবর আসে, তাদের সবাইকে জীবিত এবং নিরাপদ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই খবরে, অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলো আনন্দে উল্লাস প্রকাশ করেছে। এখন চলছে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা। আর সেজন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন স্বজনেরা।
তবে আটকে পড়া কিশোরদের জীবিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলেও গুহার চারদিকে বন্যার পানি থাকায় তারা সহজেই গুহা থেকে রেব হতে পারবে না। এজন্য তাদের কমপক্ষে চারমাস অপেক্ষা করতে হতে পারে। দেশটি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের গুহায় থাকতে হবে। তবে গুহা থেকে বের করার আগ পর্যন্ত তাদের খাবার ও চিকিৎসার সরঞ্জমাদি সরবরাহ করা হবে। এ সময় তাদের ডুবুরির প্রশিক্ষণও নিতে হবে।
Advertisement
চিয়াং রাইয়ের প্রাদেশিক গভর্নর নারোংসাক ওসোত্তানাকর্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের মিশন হলো সন্ধান কার্য পরিচালনা করা, উদ্ধার করা এবং আটকে পড়াদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। যাহোক আমরা সবেমাত্র তাদের খুঁজে পেয়েছি। উদ্ধারকর্মীরা নিখোঁজ ১৩ জনকে নিরাপদ অবস্থায় খুঁজে পেয়েছেন। এখন চলছে উদ্ধার অভিযান। তবে এর মধ্যেই তাদের কাছে যেভাবেই হোক খাবার পৌঁছানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে তারা না খেয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ডুবুরির প্রশিক্ষণ রয়েছে এমন একজন চিকিৎসককেও পাঠানো হবে তাদের কাছে। যখন চিকিৎসকরা জানাবেন তারা পুরোপুরি সুস্থ, তখন তাদের গুহা থেকে বের করা হবে।’
যে জায়গাটায় ওই ১৩ জন আটকা পড়েছে বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল, তার থেকে ৪০০ মিটার দূরে তাদের পাওয়া গেছে। নিখোঁজদের মধ্যে ১২ কিশোরের বয়স ১১ বছর থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। আর তাদের সহকারী কোচ এক্কাপোল জানথাওংয়ের বয়স ২৫ বছর। তারা মু পা নামের একটি ফুটবল দলের সদস্য।
এসআর/টিটিএন/আরআইপি