খেলাধুলা

ব্রাজিলের আছেন যে এক নেইমার

মেক্সিকোর জালে বল পৌঁছতেই মাঠ দিয়ে দৌড়ে গিয়ে যেভাবে গোল উদযাপন করলেন ব্রাজিলের কোচ তিতে তা বাচ্চাদেরও হার মানাবে। গোলপোস্টের পাশে দলা হয়ে থাকা নেইমারদের সঙ্গে মিশে গেলেন ব্রাজিল কোচ। মুহূর্তেই হারিয়ে গেলেন খেলোয়াড়দের ভিড়ে। সামারা এরেনায় তখন ব্রাজিলিয়ানদের গর্জন। ৫১ মিনিটে নেইমার ও ৮৮ মিনিটে বদলি ফিরমিনোর গোল ব্রাজিলকে পৌঁছে দিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে।

Advertisement

মেক্সিকো যেভাবে শুরু করেছিল তাতে গ্যালারি এবং বিশ্বজুড়ে ব্রাজিল সমর্থকদের বুকে ধুকধুকানি শুরু- কখন বুঝি গোল খেয়ে বসে তারা। প্রথম ২০ মিনিট মেক্সিকান ঝড় বয়ে গেল ব্রাজিলের উপর দিয়ে। পুরো প্রথমার্ধও কোনোভাবে মেক্সিকো ঠেকিয়ে পাড় করলো তিতের দল।

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল হয়ে উঠলো ব্রাজিল। আসল ব্রাজিলকে খোলস থেকে বের করলেন নেইমার নামের এক ফুটবল যাদুকর ও উইলিয়ান নামের এক কারিগর। নেইমার ও উইলিয়ান দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচটা এমনভাবে ধরলেন যে, আস্তে আস্তে প্রাধান্য চলে আসলো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের হাতে।

নেইমার কেন দলের প্রাণভোমরা তা আরেকবার প্রমাণ করলেন কোয়ার্টার ফাইনাল ওঠার লড়াইয়ে। অথচ শুরু থেকে মেক্সিকো যেভাবে আক্রমণ হানিয়েছে ব্রাজিলের সীমানায় তাতে তাদের প্রথমার্ধেই একাধিক গোলে এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু গোল করবেন কে? তাদের যে একজন নেইমার ছিলেন না। যেভাবে দুই পাশ দিয়ে ভেলা, লোজানো ও গ্যালারদোরা বৃষ্টির মতো বল ফেলেছেন ব্রাজিলের পোস্টের সামনে তাতে তাদের একজন নেইমার থাকলে হয়তো কোমড় সোজা করেই আর দাঁড়াতে পারতো না তিতের দল।

Advertisement

মেক্সিকান খেলোয়াড়দের টার্গেট ছিলেন নেইমার। তাকে আটকানোর সব পথই বেছে নিয়েছিলেন তারা। ব্রাজিলের খেলার গতি থামাতে ফাউলের পথও বেছে নিয়েছিল মেক্সিকো। তারা ১৮টি ফাউল করেছে। চারজন দেখেছেন তাদের হলুদ কার্ড। কিন্তু প্রবল পানির স্রোত যেমন কখনো কখনো আটকানো যায় না তেমন এ ম্যাচে নেইমারকে কোনোভাবেই আটকতাতে পারেননি মেক্সিকোর ডিফেন্ডাররা। বিচ্ছিন্নভাবে দুই-একবার পিএসজির সুপারস্টারের পা থেকে বল কেড়ে নিলেও তা নেইমারদের ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

নিজে গোল করেছেন, গোল করিয়েছেন। মেক্সিকোর রক্ষণভাবে সারাক্ষণ ত্রাস হয়েছিলেন নেইমার। তাকে দর্শণীয়ভাবে বল যোগান দিয়েছেন উইলিয়ান। নেইমারের গোলের বলটি তো এসেছিলে উইলিয়ানের কাছ থেকেই।

মেক্সিকোর গোলপোস্টের সামনে গিয়েও আক্রমণ আরও নিখুঁত করতে বল অন্যের পায়ে ঠেলে দিয়েছেন নেইমার। বদলি ফিরমিনোর ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলটিও যে ছিল তার নিখুঁত এক পাসের ফল। নিজে চাইলে একাই গোটা তিনেক গোল করতে পারতেন নেইমার। কিন্তু নিজের নজর জালের দিকে না দিয়ে বেশি চেষ্টা করেছেন সতীর্থ দিয়ে গোল করতে।

বল পজিশনে ব্রাজিলের চেয়ে এগিয়ে ছিল মেক্সিকো। কিন্তু গোল করতে হলে পরিকল্পিত যে আক্রমণগুলো প্রয়োজন তা করতে পারেনি তারা। ম্যাচে তারা একবারই বড় পরীক্ষায় ফেলতে পেরেছিল ব্রাজিলের গোলরক্ষক আলিসনকে। অন্যদিকে ব্রাজিল বল দখলে পিছিয়েও বারবার পরীক্ষায় ফেলেছে মেক্সিকোর গোলরক্ষককে। দুর্দান্ত কিছু সেভ করেছেন মেক্সিকোর গোলরক্ষক গুইলের্মো ওচোয়া।

Advertisement

ম্যাচের পর মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নেইমার প্রথমেই প্রশংসা করেছেন মেক্সিকোর গোলরক্ষ গুইলের্মো ওচোয়ার, ‘সে একজন বিখ্যাত গোলরক্ষক। সবাই জানে তার কোয়ালিটি কী। দুর্দান্ত এ ম্যাচ খেলার জন্য ওচোয়াকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

নিজের সম্পর্কে নেইমারের মূল্যায়ন ছিল এ রকম, ‘আমি এখানে জিততেই এসেছি। আশা করি, নিজের খেলার সবসময় উন্নতি করতে পারবো। আমি এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছি। পুরো দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। দলের সবাইকেই আমি অভিনন্দ জানাই।’

আরআই/বিএ