‘আমার বাপজান ভালো। সে ছাড়া আমরা অচল। তারে যেনো রিমান্ডে না দেয়। তারে ছেড়ে দিতে কও। সে আর আন্দোলনে যাইবো না। আমি মা হয়ে কথা দিচ্ছি।’ সোমবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বারান্দায় এভাবে কান্না করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের মা ছালেহা বেগম।
Advertisement
আরও পড়ুন : ৫ দিনের রিমান্ডে রাশেদ
রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো ও বোন সোনিয়াও আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদেরও একটাই কথা রাশেদকে যেন রিমান্ডে না নেয়া হয়। পরিবার থেকে তাকে আর আন্দোলনে যেতে দেয়া হবে না।
রাশেদের মা ছালেহা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো। কীভাবে সে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে আমরা জানি না। তাকে যেন ছেড়ে দেয়া হয়। তাকে নিয়ে আমরা গ্রামে চলে যাবো। সে আর আন্দোলনে যোগ দেবে না। আমি মা হয়ে কথা দিচ্ছি।’
Advertisement
আরও পড়ুন : কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ গ্রেফতার
রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন, ‘আমার স্বামীকে গ্রেফতারের পর থেকে আমরা পাগলের মতো হয়ে গেছি। কেউ আমাদের সহযোগিতা করছে না। পুলিশকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, আপনারা আদালতে খবর নেন। তাকে সেখানে পাঠানো হবে।’
রাশেদের বোন সোনিয়া বলেন, ‘আমার ভাইকে গ্রেফতারের পর থেকে আমরা কিছুই খাইনি। ভাই ছাড়া আমরা অচল। আমার ভাইকে যেন ছেড়ে দেয় পুলিশ। তাকে আর আন্দোলনে যোগ দিতে দেব না।’
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হান উল ইসলাম এজলাসে ওঠেন। এ সময় রাশেদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। রাশেদের কাছে বিচারক ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলিনি’।
Advertisement
তখন বিচারক রাশেদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নেতা হতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। মাথা গরম করলে নেতা হওয়া যায় না।’
এরপর বিচারক বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। সেহেতু কিছু না কিছু তো হয়েছে। আর রিমান্ড মানে তো খারাপ কিছু না। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলাম। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এই রিমান্ড কার্যকর করতে হবে।
এই দিন দুপুরে রাশেদকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় শাহবাগ থানায় দায়ের করা তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক সজীবুজ্জামান।
ঢাকা মহানগর হাকিম রায়হানুল ইসলাম শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে রোববার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
রাজধানীর শাহবাগ থানায় রাশেদের নামে মামলটি করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়। ঢাকা মহানগর হাকিম আমিনুল হক মামলাটি আমলে নিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন যা প্রজ্ঞাপন প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন। এরপরও গত ২৭ জুন রাশেদ খান কোটা সংস্কার চাই নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে লাইভে এসে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মানহানিকর বক্তব্য ও মিথ্যা তথ্য দেন।
আরও পড়ুন : কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা
এসব মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। এমন অভিযোগে রোববার (১ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগ থানায় রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
জেএ/এসএইচএস/আরআইপি