জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফর নিয়ে বিএনপি ‘স্টাডি’ করছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
Advertisement
জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা সফরকালে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কোনো বৈঠকের সম্ভাবনা আছে কি না বা ২০১৪ সালে জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন প্রতিনিধি এসে নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, এবারও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আপনারা জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘উনিতো কেবল এসছেন। আমরা আরেকটু স্টাডি করে নিয়ে কালকে বলব।’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় রেখে তার শারীরিক অবস্থাকে এক অমানবিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। গতকাল দেশনেত্রীর স্বজনরা তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেখানে তার শারীরিক অবস্থা দেখে তারা বেদনাহত ও ব্যথিত হয়েছেন। ইতোপূর্বে দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত এমনকি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার সুচিকিৎসার জন্য যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটির বিন্দুবিসর্গও পালন করা হয়নি। বরং সুচিকিৎসার দাবি করাটাও যেন দেশনেত্রীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার একটা মওকা পেয়ে গেছে দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দিয়ে তার অসুস্থতাকে চরম অবনতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তার ঘাড়ে ও বাম হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত, আর কোমর হয়ে বাম পায়ের তলা পর্যন্ত প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি অস্থির হয়ে আছেন। অস্ত্রোপচারকৃত দুটি চোখই ধূলাকীর্ণ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার প্রধানের আচরণ লজ্জাজনকভাবে নিরুচির।’
দেশনেত্রীকে বন্দি করে হাতের মুঠোয় নিয়ে কোনো অশুভ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে যে, প্রোস্টেটিককমপেটিবল এমআরআই মেশিন, উন্নতমানের সিটি স্ক্যান, ডেক্সা স্ক্যান ফর বিএমডি (বনমেরু ডেনসিটি) টেস্ট, নার্ভ কন্ডাকশন স্টাডি ফ্যাসিলিটিজ, ইএমজি ইত্যাদি যা তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য জরুরি, সেটির সুবিধা থাকায় আমরা ও তার স্বজনরা ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসার কথা বলেছি। কিন্তু সরকার মূক ও বধির হয়ে আছে। ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা না দিতে সরকার মনে হয় শপথ নিয়েছে। আর এই শপথের উদ্দেশ্যই হচ্ছে-জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করতে বেগম খালেদা জিয়াকে ক্রমাগত কষ্ট দিয়ে তার জীবনকে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত করা। আমরা আবারও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই-বেগম জিয়ার প্রতি এই অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। তার ন্যুনতম কোনো ক্ষতি হলে সরকার জনগণের ক্রোধ থেকে রেহাই পাবে না। আমি আবারও দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
Advertisement
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘আমরা ইতোপূর্বে বলেছিলাম-শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেয়াটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর তামাশা। সমগ্র জাতি এখন সেই রঙ-তামাশার দৃশ্য অবলোকন করছে। মূলত প্রধানমন্ত্রী সেদিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। ছাত্রলীগের মন শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রঙ-বেরঙের রাঙানো।’
ছাত্রলীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সময়ের ছাত্রলীগ প্রকৃত কোনো ছাত্র সংগঠন নয়, এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাড়াটিয়া বাহিনী। শিক্ষাঙ্গনের গণতন্ত্রবিরোধী বিপজ্জনক শক্তি হচ্ছে ছাত্রলীগ। বর্তমানে খুন, জখম, হাঙ্গামা, হল দখল, সিট বাণিজ্য, শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার প্রতীকে পরিণত হয়েছে বর্তমান ছাত্রলীগ। আর সেজন্যই পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগও নেমে পড়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষতবিক্ষত করতে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান সুরুজ, পল্টন বিএনপি নেতা ফিরোজ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/আরআইপি
Advertisement