নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই , তিনি পরের বিশ্বকাপ খেলবেন কি না। আবার খেলতে পারবেন না, ২০২২ এ কাতারে ফুটবলের অনুপম শিল্পীর নৈপুণ্যের দেখা মিলবেই না- তাও বলা কঠিন।
Advertisement
চার বছর অনেকটা সময়। তখন তার বয়স ৩৫ এর বেশি হয়ে যাবে। তাই ভাবা হচ্ছে, হয়ত আজই বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন আর্জেন্টিনা তথা বিশ্ব ফুটবলের দিকপাল লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে অগণিত মেসিভক্ত ধরেই নিয়েছিলেন সময়ের সেরা ফুটবলারের হয়ত এটাই শেষ বিশ্বকাপ। সে জন্যই প্রত্যাশার মাত্রা ছিল বেশি। অনেকেই উন্মুখ অপেক্ষায় বসেছিলেন, হয়ত এবারই তার হাতে শোভিত হবে বিশ্বকাপ ট্রফি।
কিন্তু হায়! মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। সেই বিশ্বকাপ থেকে শূন্য হাতে বিদায় নিলেন লিওনেল মেসি! কোটি কোটি ভক্তর চোখের জলে বিদায় সময়ের সেরা ফুটবল শিল্পীর। হয়ত আজই বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন আর্জেন্টিনার এ জাদুকরি ফুটবল প্রতিভা।
Advertisement
প্রিয় তারকার এমন করুন বিদায় মানতে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে অগণিত মেসি ভক্ত ও আর্জেন্টিনা সমর্থকের। ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে অগণিত মেসি ভক্তর। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন অনেকেই।
মেসি ভক্তরাতো বটেই, অনেক ফুটবল অনুরাগীরও আক্ষেপ, ‘মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠলো না? মেসি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারলেন না?’ এটা কি মেসির ব্যর্থতা? না দুর্ভাগ্য। নাকি আর্জেন্টিনার দূর্বলতা ও অদক্ষতা? তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে।
তবে মেসি আর কিইবা করতে পারতেন? একা তো বিশ্বকাপের মাঠে নকআউট পর্বে বিগ ম্যাচ জেতানো যায় না? সে জন্য দরকার টিম পারফরমেন্স। সঙ্গে ভাগ্যের আনুকুল্যটাও দরকার। বিশ্বকাপে ভালো করতে ভাগ্যের সহায়তাও দরকার। বিশ্বকাপ ফুটবল যে বড় নিষ্ঠুর! সবার ভাগ্যে সয় না। ওয়ার্ল্ডকাপ সবাইকে ফেবারও করে না।
যেমন করেনি জিকোকে। আশির দশকে ম্যারাডোনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ব্রাজিলের ‘সাদা পেলে’ খ্যাত জিকো; কিন্তু ১৯৮২ আর ১৯৮৬ সালে ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি তিনি। ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই তাকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে।
Advertisement
এবার বিশ্বকাপ শুরুর আগেও তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মেসি কি করবেন? কোথায় গিয়ে থামবেন? আর্জেন্টিনাকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়ে ফুটবল মহারাজ দিয়েগো ম্যারাডোনার পাশে বসবেন? নাকি জিকোর মত ট্র্যাজেডি কিং হয়েই বিদায় নেবেন? এ প্রশ্ন সামনে রেখেই শুরু হয়েছিল এবারের বিশ্বকাপ ফুটবল।একজন ফুটবলারের পক্ষে যা যা অর্জন করা সম্ভব, ব্যক্তিগত পর্যায় এবং ক্লাব ফুটবলে মেসি তার সবটুকুই করে দেখিয়েছেন। ক্লাব ফুটবলে তার সাফল্য আকাশছোঁয়া; কিন্তু হায়! সেই মেসি আর্জেন্টিনাকে আর বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারলেন না। বার্সেলোনার সাফল্যর রূপকার মেসি এক কথায় খালি হাতেই বিদায় নিলেন।
কি অদ্ভুত! ১৯৮৬ সালে যে দলের কাছে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছিল জিকো-সক্রেটিসের ব্রাজিলের। ৩২ বছর পর সেই ফ্রান্সের কাছে হেরেই শেষ হলো মেসির বিশ্বকাপ। নিজের সেরাটা উপহার দিতে পারেননি। ক্লাব ফুটবলে প্রায়শই যে মেসি ম্যাজিক চোখে পড়ে, তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত।
তারপরও আজকের ‘রাউন্ড অফ সিক্সটিন’ বা সেরা ষোলোর লড়াইয়ে মেসি যে একদমই নিষ্ক্রীয় ছিলেন, তা বলা যাবে না। ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা ডি মারিয়ার দুর পাল্লার বাঁকানো শটে খেলায় ফেরার পর মেসির দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ফরাসী রক্ষণভাগ চিরে মেসির বাড়ানো বলে পা ছুঁয়ে ফ্রান্সের জালে বল পাঠান গ্যাব্রিয়েল মার্কাদো।
পিছিয়ে পড়ে ২-১ অবস্থায় কোথায় দল হবে উজ্জীবিত, উদ্বুদ্ধ, অনুপ্রাণিত। জয়ের উদগ্র বাসনায় প্রতিটি ফুটবলার নিজের সর্বস্ব উজাড় করে চেষ্টা করবেন। তা না, উল্টো কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন আর্জেন্টাইনরা। মেসিকে বল দেয়ার মত কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাঝ মাঠ থেকে কেউ একজন বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলেন না। বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার কাজেও চরম অদক্ষতার ছাপ রাখলেন আর্জেন্টাইনরা।
এর সাথে যোগ হলো রক্ষণভাগের চরম খারাপ পারফরমেন্স। কোন একটা সময় রক্ষণভাগের ওপর চাপ আসতেই পারে। এই যেমন সার্বিয়ার বিপক্ষে একটা সময় চরম চাপে পড়ে গিয়েছিল ব্রাজিল; কিন্তু হলুদ জার্সিধারীরা চীনেরে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যা ভেদ করে গোল আদায়ে সক্ষম হয়নি সার্বিয়ানরা।
কিন্তু আজ আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ একটু চাপেই বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে পড়লো। এমন কাঁচ ভঙ্গুর রক্ষণভাগ খুব কমই চোখে পড়েছে এবারের বিশ্বকাপে। এক সময় তো বল গেলেই গোল হয়ে যাচ্ছিলো। একজন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার ফরাসী ফরোয়ার্ডদের আটকে রাখতে পারেননি। না স্পিডে পেরেছেন, না ট্যাকল করা সম্ভব হয়েছে।
কোথা দিয়ে আসা বল কোথায় গিয়ে কার পায়ে পড়বে, এই বোধটাই যেন কাজ করেনি আর্জেন্টাইনদের। অ্যান্টিসিপেশন বলতে যা বোঝায়, আর্জেন্টিনার ডিফেন্সিভ মিডিফিল্ডার আর রক্ষণভাগের কারো মধ্যে তা ছিল না। ফরাসী ফরোয়ার্ডরা কে কোথায় আছেন? তা বুঝতেই যেন হিমসিম খেয়েছেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা।
কেউ শক্ত ট্যাকল করা বহূদুরে একচান্সে বল ক্লিয়ারও করতে পারলেন না। তারই ফলশ্রুতিতে ৫৭ থেকে ৬৮ মিনিট, মাত্র ১১ মিনিটে পরপর ৩ গোল হজম করে বসতে হলো মেসিদের। আর তাতেই ম্যাচ হাতছাড়া। শেষ মুহূর্তে সার্জিও আগুয়েরোর গোলটি শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে।
আসলে দুর্বল রক্ষণভাগই ডুবিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। এমন ভাঙ্গাচোরা ডিফেন্স দিয়ে ওয়ার্ল্ড কাপে বিগ ম্যাচ জেতা কঠিন। তাই তো এক গোল খেয়ে দুই গোল করার পরও শেষ রক্ষা হলো না। কোটি কোটি ভক্তের চোখের জলে বিদায় নিতে হলো মেসিদের।
এআরবি/আইএইচএস