খেলাধুলা

কাজানে থামলো মেসি-ম্যারাডোনা গর্জন

আর্জেন্টিনার প্রতিটি ম্যাচেই গর্জন উঠেছে মেসি-ম্যারাডোনার নামে। মস্কোর স্পার্টাক স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে নিঝনি নভগোরদ, সেন্ট পিটার্সবার্গ-সব জায়গায় আর্জেন্টিনা সমর্থকরা মুখরিত করেছিল তাদের দুই ফুটবল ঈশ্বর মেসি-ম্যারাডোনার নামে স্লোগান দিয়ে। কিন্তু আজ থেকে এই বিশ্বকাপে আর শোনা যাবে বিশ্বজুড়ে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সেই গগন ফাটানো স্লোগান।

Advertisement

গোল-পাল্টা গোলের ম্যচে শেষ হাসি ফরাসিদের। কিন্তু কাজান এরেনায় ফ্রান্সের সমর্থক ছিলো বড়জোর হাজার তিনেক। যারা দুই গোল পোস্টের পেছনের গ্যালারিতে বিশাল পৃথিবীতে ছোট মানচিত্রের মতো হয়েছিল। এগিয়ে যাওয়া গোলের পর আওয়াজ তুলেছিল তারা। তবে পিছিয়ে পড়ে সমতায় ফেরার পর প্রথম গোলের মতো আওয়াজ ওঠনে ফরাসিদের কণ্ঠে। প্রতিপক্ষ দলে আছেন মেসির মতো তারকা-এগিয়ে যাওয়ার পর হয়তো ভরসা ছিল না তাদের।

কিন্তু এগিয়ে থাক, পিছিয়ে থাক কখনো উল্লাস কমেনি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। কেবল আর্জেন্টাইনরাই নয়, মেসিদের জার্সি গায়ে গ্যালারিতে বসা ভিনদেশি সমর্থকরাও তাদের সঙ্গে সমান তালে গলা ফাটিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু সব উল্লাস থেমে গেলো চতুর্থ ম্যাচে এসে। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারের পরও ভরসা ছিল আর্জেন্টনাইনদের। মেসি আছে বলে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত উঠেছিলও দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু চতুর্থ ম্যাচে এসে আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা। গোলময় ম্যাচে ৪-৩ ব্যবধানে হেরে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নেয় গতবারের রানার্সআপরা।

আর্জেন্টিনার বিদায় মানে শুধু একটি দলের বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হওয়া নয়, আর্জেন্টিনার বিদায়তো বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবল ভক্তের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া। এটা ঠিক বিশ্বে এমন অনেক আর্জেন্টিনার পাগল সমর্থক আছে যারা এই বিশ্বকাপের আর কোনো খেলা দেখবে না। কয়েকদিন নাওয়া-খাওয়া বন্ধ রাখার মানুষেরও অভাব নেই।

Advertisement

ম্যাচের শেষ কয়েকট মিনিট তাকানো যায়নি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দিকে। প্রেসবক্সে যে জায়গাটায় আসন পেয়েছিলাম তার পাশ ঘেঁষেই ছিল কয়েক হাজার আর্জেন্টিনার সমর্থক। সারাক্ষণ তাদের গান আর গলা ফাটানোর দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে সেদিকে। কিন্তু শেষ দিকে তাদের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি যেন গালে বেদনার চিহ্ন এঁকে দিচ্ছিল। পৃথিবীর সব হারানোর মানুষের মতো সমর্থকরা যখন ম্যাচের পরও মাথা নিচু করে চোখের পানিতে হাঁটু ভিজাচ্ছিলেন তখন অন্যদের চোখের পানি আটকানোও কঠিন ছিল।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই দলেরই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা জেগেছিল। দুই দলই আবার কোটি কোটি সমর্থকের মুখে হাসি ফুটিয়ে দাপটের সঙ্গে উঠেছিল শেষ ষোলোতে। এত আগে বিশ্বের দুই জনপ্রিয় দলের বিদায় চাইনি অনেকে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা না থাকা মানেইতো বিশ্বকাপ রঙহীন হয়ে যাওয়া। আর্জেন্টিনার বিদায়ে তো রং হারালোই বিশ্বকাপ।

আরআই/জেএইচ

Advertisement