দেশজুড়ে

শ্রীপুরে কারখানার বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে কৃষি জমি

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রায় ১০-১২টি খাল প্রবাহমান। এর মধ্যে লবলং খাল, ধাউর খাল, টেংরার খাল, কাটার খাল, সেরার খাল, চোক্কার খাল, কেওয়ার খাল, তরুণের খাল, সালদহ খাল অন্যতম। এ খালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের শিল্প-কারখানা।

Advertisement

কল-কালখানার বিষাক্ত বর্জ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে লবলং খাল। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খালের আশপাশের কৃষি জমি। কল-কাখানার নানা রকমের বিষাক্ত বর্জ্য খালের পানিতে মিশে তা কৃষি জমিতে গিয়ে পড়ছে। এতে কৃষি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। ফলে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না।

এদিকে, খালে পানিতে আবাসস্থল হারাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ ও বিভিন্ন প্রকারের জলজপ্রাণি। খালের পাড়ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালাও মারা যাচ্ছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে পরিবেশ। ফলে খালকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ওসব এলাকার কৃষিনির্ভর অর্থনীতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

খাল সংলগ্ন স্থানে প্রায় বিঘা খানেক চাষের জমি রয়েছে কৃষক মোখলেছুর রহমানের। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও এই খালের পানি ব্যবহার করে সব ধরনের চাষাবাদ করতেন। খালকেন্দ্রিক বিভিন্ন কল-কারখানা নির্মাণের পর এর পানি দূষণ হওয়া শুরু হয়। পানি ব্যবহারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে কৃষি জমিতে উঠে যায়। এতে ধানের খেতে আগের মতো ফসল তো হয়ই না, এখন খালের পানি খেতে ঢুকলে ধান গাছের চারাও মরে যায়।

Advertisement

ধনুয়া গ্রামের কৃষক খোরশেদ জানান, ছোটকালে এই খালের পানিতে সাঁতার কাটতেন। বর্তমানের খালের পাশে দাঁড়ালেই গন্ধে পেট ফুলে যায়। কল-কারখানার পাশাপাশি স্থানীয়রাও খালের পানি দূষণ করছে। এতে বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণির অস্তিত্ববিলীন। খাল পাড়ের বিভিন্ন ধরনের গাছপালা মারা যাচ্ছে।

রসায়নবিদ ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সাঈদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে একটি সময় ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক প্রাপ্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে। এ সমস্যায় পড়বে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিল্প এলাকাগুলো। প্রচুর পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি প্রতিদিন তুলে ফেলে তা দূষিত করে আবার প্রকৃতিতেই ছাড়া হচ্ছে। গাজীপুরের লবলং খালটি একটি বৃহৎ খাল বলা যেতে পারে। এই খালের পানি দূষিত মাত্রা অতিক্রম করেছে। খালের পানি এতটাই কম্পোজিট হয়ে পড়েছে যে এই পানি অনেক জায়গায়ই জেলির মত। কেমিক্যাল মিশ্রিত এবং ভারি জৈব ধাতব মৌল সংমিশ্রিত। এলাকার পানির পিএইচ ঘনমাত্রা তো কমছেই তার সঙ্গে বর্ষাকালে পানিগুলো ছড়িয়ে পড়ছে ধানখেতসহ বিভিন্ন কৃষকের ফসলের খেতে। অবাক করা বিষয় হলো এ বিষয়ে কৃষকরা সচেতন নয়। ভারি ধাতু মিশ্রিত পানিগুলো ধান ও কৃষকের বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু ভারি ধাতু মিশ্রিত বললে ভুল হবে কারণ এই খালেই ফেলা হয় বিভিন্ন কল-কারখানা কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ও বর্জ্য, হাসপাতালে বর্জ্য, বিভিন্ন প্রাণির মরদেহ ও মনুষ্য বর্জ্যও। দ্রুত খালটির পানি সরকার থেকেই পরীক্ষা করা প্রয়োজন এবং কোন কোন জায়গায় সরকারি উদ্যোগে সেন্ট্রাল ইটিপি স্থাপন করা প্রয়োজন। যদি দ্রুত এ ব্যবস্থাগুলো করা না যায় তবে এই এলাকাটি দূষিত পানির খনিতে পরিণত হবে। যা হতে পারে মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি উদ্বেগজনক।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএসএম মূয়ীদুল হাসান জানান, সবার আগে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। খালের আশপাশে বহু কল-কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে খালকে বেঁছে নিয়েছে। কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি ইটিপি প্লান্ট ব্যবহারের মাধ্যমে দূষণমুক্ত করে বাইরে ফেলার নির্দেশনা দিলেও তারা তা মানছে না। ফলে কেমিক্যালযুক্ত কারখানার খালের পানি উপচে কৃষকের খেতে ঢুকে যাচ্ছে। তাতে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের জমির উর্বরতা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত এ ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নেয়া হবে।

শিহাব খান/এএম/আরআইপি

Advertisement