রাজনীতি

ফ্লোরিডায় ইভিএমে কী হয়েছিল, তা বলতে চাই না : হাছান

গাজীপুর নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও আমরা দেখেছি। ফ্লোরিডায় ইভিএমের (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) মাধ্যমে কী হয়েছিল...আরও নানা কথাবার্তা আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না।’

Advertisement

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন >> গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

গত ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। তবে ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর এ নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে।’

Advertisement

তার ওই বক্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গাজীপুরে নির্বাচন হলো, দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলো। বিএনপি এমন একজন প্রার্থী দিলেন যাকে দুজন ধরে উঠাতে হয় আবার দুজনে ধরে নামাতে হয়। যার পরিবার আহসান উল্লাহ মাস্টারের খুনের সঙ্গে যুক্ত। যে প্রার্থী হাঁটতে-চলতে পারেন না, সেই প্রার্থীকে নিয়ে দল হাঁটতে-চলতে পারবে- এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’

তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘গতকাল দেখলাম একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত গাজীপুরের ইলেকশন নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তাও সাংবাদিকদের একটি সভায়। আমি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা দয়া করে....বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাবেন না। এটি কোনো স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, গ্রহণযোগ্য নয়।’

‘পশ্চিমবঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচন ছাড়াই জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনের সময় হাফ ডজনের বেশি মানুষ সহিংসতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সেখানকার তুলনায় গাজীপুর ও খুলনার নির্বাচন বহু সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ হয়েছে। এটির প্রশংসা করুন।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনও আমরা দেখেছি। ফ্লোরিডায় ইভিএমের মাধ্যমে কী হয়েছিল...আরও নানা কথাবার্তা আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। অন্য দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা বা নির্বাচন নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না।’

Advertisement

আরও পড়ুন >> গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে : ইডব্লিউজি

‘আমি সম্মানিত বিদেশি রাষ্ট্রদূতবর্গের প্রতি অনুরোধ জানাব, আপনাদের যেদি কোনো পরামর্শ বা বক্তব্য থাকে সেটি আপনারা সরকারের সঙ্গে যখন বৈঠক হয় তখন উপস্থাপন করুন। জনসমক্ষে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রাখা, সেটি সমীচীন নয়। ভারতে কী আপনারা পারেন? পারেন না’- বলেন সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আজ বিশ্ব ব্যাংক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রশংসা করে। আজ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের মানুষ আজ সুখী, দেশের মানুষ সরকারের ওপর সন্তুষ্ট, কিন্তু একটি পক্ষ সন্তুষ্ট নয়। এরা কারা- এরা হচ্ছে বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলসমূহ আর কিছু ব্যক্তিবর্গ, যারা রাত ১২টার পর টেলিভিশনের পর্দা গরম করেন। যারা বুঝাতে চান তারা মহাজ্ঞানী, কোনো কিছু হলেই সেখানে ভুল ধরেন। আমি ওদের নাম দিয়েছি ভুল ধরা পার্টি। এরা রাত ১২টার পর ভুল ধরা পার্টি। বিএনপি আর ভুল ধরা পার্টি খুশি না।’

আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, বাংলাদেশ ন্যাশানালিস্ট পার্টিকে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি বানাইয়েন না। মানুষ বলে, আপনাদের কাজ হচ্ছে বিদেশিদের কাছে ধর্ণা দেয়া, তাদের বিভ্রান্ত করা। যেভাবে গতকাল যে রাষ্ট্রদূত বক্তব্য রেখেছেন, তাকে আপনারা বিভ্রান্তের চেষ্টা করেছেন আর অন্যদেরও বিভ্রান্তের চেষ্টা করছেন।’

‘তারা আবার ডাক দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের, কিন্তু নিজেদের দলের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। নিজের দলের নেতারা হাইকোর্টে বোরখা পড়ে হাজির হন। এমন তাদের ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের কথা চিন্তার আগে আমি আপনাদের অনুরোধ করব, নিজ দলের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করুন। আপনাদের পরাজয়ের অন্যতম বড় কারণও সেখানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী যে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে, ইনশাআল্লাহ সেখানেও আমরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব। আপনারা আগামী নির্বাচনে ভালো করার জন্য দলকে গোছান, মানুষের কাছে যান। বিদেশিদের দুয়ারে ধর্ণা না দিয়ে জনগণের দুয়ারে ধর্ণা দেন।’

স্বাধীনতা পরিষদের উপদেষ্টা শিহাব রিফাত আলমের সভাপতিত্বে সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান আলোচক, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমএআর/এমএস