দেশজুড়ে

আদরের ছেলের শিকলবন্দি জীবন

মাদকসেবী ছেলের অত্যাচারে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চরদিয়াশুর এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী হানিফ হাওলাদার (৫৫) ও তার পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মাদকের কবলে রুবেল (২২) এখন উন্মাদ। নেশার টাকার জন্য সে তার মা-বাবাসহ প্রতিবেশীদের ওপর হামলা শুরু করেছে। নিরুপায় হয়ে ঈদের পরের দিন থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় মাদকসেবী ছেলে রুবেলকে শিকলবন্দি করে রেখেছেন বাবা-মা।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, মাদকসেবী রুবেলের বাবা হানিফ হাওলাদার গরীব ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। হানিফ প্রতিবন্ধী হয়েও জীবিকার জন্য ঝালমুড়ি বিক্রি করে আয় রোজগার করছেন। তার স্ত্রী রাশিদা বেগম (৪৮) রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করছেন মাসিক ৩ হাজার টাকা বেতনে। তাদের দুই মেয়ে নুপুর (২৬) ও ঝুমুর (২৪) এবং ছেলে রুবেল সবার ছোট।

হানিফ হাওলাদারের উভয় মেয়ের বিয়ে হলেও বড় মেয়ে নুপুরকে এক ছেলেসহ তার স্বামী কয়েক বছর আগে বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। এ কারণে এখন তিনিও বাবা-মায়ের ঘাড়ে। হানিফ হাওলাদার ও রাশিদা বেগমের আশা ছিল একমাত্র ছেলে রুবেল বড় হয়ে তাদের কষ্ট ঘুচাবে। এ কারণে রুবেলকে ছোটবেলা থেকেই বেশি আদর দিয়ে বড় করেছেন। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। আদরের ছেলে রুবেল মাদকাকাসক্ত হয়ে এখন পরিবারের সবার আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছোট বয়স থেকেই রুবেল গাঁজা ও গাম জাতীয় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। নিজের আয় রোজগারের টাকা ফুরিয়ে গেলে সে বাবা-মায়ের টাকা-পয়সা চুরি এমনকি ঘরের মালামাল চুরি করে বিক্রি করে নেশার টাকা যোগাড় করতো। শত চেষ্টা করেও তাকে নেশার কবল থেকে ফেরাতে পারেননি তার বাবা-মা। বছর খানেক আগে তাকে বিয়ে করানো হয়। কিন্তু মাদকাসক্ত হওয়ায় তার বিয়েও টেকেনি। বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পর স্ত্রীও মাদকাসক্ত রুবেলকে ছেড়ে চলে গেছে।

Advertisement

রুবেলের বাবা হানিফ হাওলাদার জানান, কয়েকমাস আগে রুবেল ঢাকায় যায় । ঈদের কয়েকদিন আগে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে এসে পাগলের মত আচরণ শুরু করে। সবার সঙ্গেই খারাপ আচরণ করে। কোনো সমাধান না পেয়ে ওর হাত-পায়ে শিকল পরিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তার বলেছে- উন্নত চিকিৎসা করালে রুবেল ভালো হবে। কিন্তু আমি তো গরীব মানুষ, টাকা-পয়সা নাই।

সাইফ আমীন/আরএআর/এমএস

Advertisement