নিজেদের ইতিহাসে এর আগে আরও চারবার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে তিউনিশিয়া। কিন্তু ১৯৭৮ সালে প্রথমবার অংশ নিয়ে মেক্সিকোকে হারানোর পর আর জয়ের দেখা পায়নি ‘কার্থেজের ঈগল’ খ্যাত দলটি। ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে কোনো জয়ের মুখ না দেখেই প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা।
Advertisement
এবারের বিশ্বকাপেও প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে তারা। তবে একটি জায়গা থেকে ব্যতিক্রম রাশিয়া বিশ্বকাপ। কারণ এই বিশ্বকাপেই নিজেদের ৪০ বছরের জয়খরা ঘোচালো তিউনিশিয়া। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পানামাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে জয়ের মুখ দেখল তারা। অন্যদিকে তিন ম্যাচের সবকটি হেরেই বিশ্বকাপ শেষ করল পানামা।
নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই নিশ্চিত ছিল পানামা ও তিউনিশিয়ার প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তাদের সামনে লক্ষ্য ছিল কেবল ইতিবাচক ফল নিয়ে বিশ্বকাপটা শেষ করা। সেলক্ষ্যে ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষে সফল ছিল পানামাই। ম্যাচের মাঝপথ পেরিয়ে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা।
তবে পানামার গোলে তাদের চেয়ে বেশি অবদান তিউনিশিয়ারই। কেননা ম্যাচের ৩৩তম মিনিটে ইয়াসিন মেরিয়াহর আত্মঘাতী গোলেই লিড পায় পানামা। ডি বক্সের বাইরে থেকে হোসে লুইস রদিগেজের দুরপাল্লার শট মেরিয়াহর পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় নিজেদের জালেই।
Advertisement
শুধুমাত্র আত্মঘাতী গোলটি ব্যতীত প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় দাপট দেখিয়েছে তিউনিশিয়া। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই ফারজানির সাসির দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তায় আক্রমণ করে তারা। তবে পানামার গ্যাব্রিয়েল গোমেজের দারুণ ডিফেন্ডিংয়ে সে যাত্রায় রক্ষে পায় পানামা।
পানামার রক্ষণে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তিউনিশিয়া। কিন্তু ফিনিশিং ব্যর্থতায় গোলের দেখা পায়নি তারা। উল্টো ৩৩তম মিনিটে নিজেদের জালেই বল ঢুকিয়ে দেন মেরিয়াহ।
প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগমুহুর্তে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন ফারজানি সাসি। প্রথম ৪৫ মিনিটে ৭৩ শতাংশ সময় নিজেদের কাছে বল রেখেও ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে তিউনিশিয়া।
তবে বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচে সমতা ফেরাতে খুব একটা সময় নেয়নি কার্থেজের ঈগলরা। ম্যাচের ৫১তম মিনিটে দলের পক্ষে প্রথম গোলটি করেন ফখরুদ্দিন বিন ইউসুফ। নাইম স্লিতির কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ এক পাসে ফখরুদ্দিনের গোলে এসিস্ট করেন ওয়াহবি খাজরি।
Advertisement
ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দেয় তিউনিশিয়া। তবু প্রথমার্ধের মতোই ফিনিশিং ব্যর্থতায় লিড পাওয়া হচ্ছিল না তাদের। অবশেষে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে ওসামা হাদ্দাদির পাস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ওয়াহবি খাজরি। ৪০ বছর পর বিশ্বকাপে ম্যাচ জেতার বারুদ পায় তিউনিশিয়া।
ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে গোল পাওয়ার চেষ্টায় একের পর এক ফাউল করতে শুরু করে পানামার ফুটবলাররা। যার ফলশ্রুতিতে ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে রিকার্ডো অ্যাভিলা, ৮০তম মিনিটে গ্যাব্রিয়েল গোমেজ এবং যোগ করার একদম শেষ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন বদলি হিসেবে খেলতে নামা লুইস তাদেজা।
হলুদ কার্ড দেখার দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না তিউনিশিয়াও প্রথমার্ধে সাসি হলুদ কার্ড দেখার পর ম্যাচের ৭১তম মিনিটে আনিস বদ্রি ও যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কার্ড দেখেন ঘাইলেন চালালি।
তবে এসব কার্ড বিতর্ক ছাপিয়ে রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সাথে সাথেই উল্লাসে মেতে ওঠে তিউনিশিয়ার ফুটবলাররা। ৪০ বছর পর বিশ্বকাপে জয় পাওয়া বলে কথা।
এসএএস/বিএ