দেশজুড়ে

কিশোরীকে গলা কেটে হত্যা : পুলিশকে ভাবাচ্ছে মায়ের হাতের দাগ

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ায় কিশোরী ইনহাস বিনতে নাছিরকে (১২) গলা কেটে হত্যার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ঘটনার কারণ জানতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পরে নিহত ইনহাসের মা নাসরিন আক্তার খুশবুর অসংলগ্ন কথা ও তার হাতে কাটা দাগ যেমন ভাবাচ্ছে পুলিশকে, তেমনি সম্প্রতি নগরে বেড়ে যাওয়া চোর চক্রের উৎপাতও সামনে চলে আসছে।

Advertisement

ঘটনার পর থানা পুলিশ ও সিএমপি (চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ) দক্ষিণ জোন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

মা নাসরিন আক্তার খুশবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পেশাদার খুনি কিংবা পারিবারিক কোনো বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড হতে পরে। নাসরিন আক্তার খুশবুর হাতে কাটা দাগ দেখা গেছে। তিনি (মা) বলছেন, ‘মেয়েকে রক্তাক্ত দেখে আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি।’ তবে শহরে পেশাদার একটি অপরাধী চক্র বাসায় চুরি-ডাকাতি করার জন্য ঢুকেছিল কি না, বিষয়টিও নজরে রেখেছি।

Advertisement

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রামের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিহতের মায়ের আচরণ সন্দেহের কারণ হিসেবে সামনে আসছে। যখন আমরা তার বাড়িতে যাই তখন নাছরিন আক্তারের হাতে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। তবে তদন্তের আগে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর মা নাছরিন আক্তার খুশবু প্রতিবেশীদের কাছে বিভ্রান্তিকর কথা বলেন। তিনি কখনো বলেন, ঘটনার দিন সকালে মেয়েকে নফল নামাজ ও কোরআন পড়িয়েছেন। পরে তিনি বাসায় ফিরে এসে মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেন। আবার বলছেন, মেয়ে তার ঘরে খুন হলেও পাশের ঘরেই তার ছোট বোন ঘুমাচ্ছিল। খুশবুর দাবি ইনহাসকে খুন করে আলমারি ভেঙে গয়না নিয়ে গেছে ঘাতকরা। স্থানীয়দের প্রশ্ন, আলমারি খোলা বা ভাঙার শব্দে পাশের ঘরে ঘুমন্ত ছোট বোন জেগে উঠল না কেন?

এদিকে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে গেলে নিহতের মা নাসরিন জানান, ঘটনাস্থলে রুমের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা গিয়ে মেঝেতে কাপড়চোপড় এলোমেলো অবস্থায় পেয়েছি। কাপড়ের ভেতরে পেয়েছি আলমারির চাবি। আবার পাশেই ইমিটেশনের গহনার বাক্সও ছিল। কিন্তু সেখান থেকে কিছু নেয়া হয়নি। আমাদের প্রশ্ন হলো, এটি যদি নিছক ডাকাতির ঘটনা হতো, তাহলে ইমিটেশনের অলঙ্কার ফেলে স্বর্ণালঙ্কারগুলো চিনল কীভাবে?

নিহত ইনহাস (১২) নগরীর মেরন সান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। বাবা মোহাম্মদ নাছির সৌদি আরবে থাকেন। ঘটনাস্থল ছয় তলা লায়লা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় নাছির ও তার তিন ভাইয়ের পরিবার থাকে। নাছিরের পরিবার থাকে পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে। আর নিচ থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেয়া। নাছিরের মতো তার তিনভাইও সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের আরেক ভাই পরিবার নিয়ে সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর ঢেমশা গ্রামে পৈত্রিক বাড়িতে থাকেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহাম্মদ নাছির ও নাসরিন আক্তার খুশবু দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে ইনহাস সবার বড়। লায়লা ভবনের পঞ্চম তলায় তিন কক্ষের বাসায় তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন খুশবু। ঈদে সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর এখনও ফেরেননি তার শাশুড়ি। ঘটনার দিন বুধবার (২৭ জুন) সকাল ৮টার দিকে মেজো মেয়েকে স্কুলে দিতে বাইরে যান খুশবু। ঘরে তখন ইনহাস আর আড়াই বছর বয়সী ছোট মেয়ে ছিল। সকাল ৯টার দিকে বাসায় ফিরে তিনি ঘরের দরজা চাপানো অবস্থায় পান। পরে ইনহাসের ঘরে গিয়ে তাকে বালিশ চাপা অবস্থায় শোয়ানো দেখতে পান। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে বালিশ তুলে খুশবু দেখেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এরপর তার চিৎকারে পাশের বাসা থেকে অন্যরা ছুটে এসে ইনহাসকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেডএ/পিআর