সাহিত্য

আমার কবিতাভাবনা

যেদিন থেকে কবিতা লিখতে শুরু করেছি; অনুভব করেছি, খাওয়াপরার মতো কেউ একজন এ দায়িত্ব আমার উপর আগেই দিয়ে রেখেছে। সেই থেকে যা কিছুই ঘটে, যা কিছুই করি-দেখি-বলি তার অনিবার্য কিছুকে সুন্দরের অর্ঘ্য পরিয়ে সুনির্বাচিত শব্দে উপস্থাপনের তাড়না তৈরি হয়েই চলেছে। যা থেকে সামান্য বিচ্যুত হলে, নিজের অস্তিত্ব হাতড়াতে হিমশিম খাই।   ওবায়েদ আকাশ-এর ৪টি কবিতা উচ্ছৃঙ্খল ঘড়ি ঘুমন্ত মায়েদের মধ্যে বড় হচ্ছে শিশুদের হাত-পা-মগজজীবিত মায়েদের মধ্যে বড় হচ্ছে স্বপ্নের হাত-পা-মগজ বুনো কালো হাতির দাঁত থেকে গড়ে উঠেছে এই অনন্য রাজবাড়িযার প্রতিটি কক্ষের নিচে- কৃষি সমাবেশেশেখানো হচ্ছে উপাসনাগৃহের নানান পদ্ধতি, আর কোথাও জানলা ভেঙে উপচেপড়া মেঘে, সাঁতারের সমূহ কলাপ্রকাণ্ড কাঠবিড়ালি তার লেজ থেকে ছুড়ে মারছেমানুষের শিকারের গূঢ় অভিলাষ। আর ঘুমন্ত পাতাদের ওপরউড়ে উড়ে নিশ্চিন্ত করছে পাখিদের ভবিষ্যৎ জীবনসূর্যের সুখ্যাতি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসছে প্রকাণ্ড হাতির পালতাদের হারানো দাঁত ও নির্বিঘ্ন বাঁচার দাবিতে কলাপাতায় মোড়ানো হচ্ছে ভবিষ্য যুদ্ধের সাহসকচি সবুজ আকাশের দিকে মানুষের দৃষ্টি পড়ে আছেউড়ন্ত আকাশ কেটে কেটে নির্মিত হচ্ছে চাঁদমুখ                                সভ্যতার উচ্ছৃঙ্খল ঘড়িগাছের গভীরে গাছের ভেতর উঁকি দিলেতোমার মুখ পাতায় ঢেকে যায়তোমার কিছু করণীয় থেকেপ্রতিটি পাতার দীর্ঘশ্বাস বিবেচনা করে থাকিআর ভাবি একদিন শুকিয়ে যাওয়া সমুদ্রের বাসিন্দাআজ কী করে নিরেট বৃক্ষবাসী হলেবৃক্ষদের বাকলের নিচে ঘুমিয়েছে অপার পৃথিবীশীত ঋতুর নামে যা শুধু সংগোপন লুকিয়ে রেখেছআর ভুখানাঙা জলাশয়ে ভরে গেছে হলুদ পত্রালিআজ তার গভীরে শুয়ে সুনিপুণ দীর্ঘশ্বাস শেখোচাও বা না চাও, চারিদিকেগৃহগুলো শীতের আগুনে পুড়ছেগাছের গভীরে ঢুকে মায়াকাননের চাঁদতোমার মুখ ইতিউতি করে খুঁজছেআর প্রতিবার ঘুমিয়ে গেলেপৃথিবীর নিভৃতি সকলউলটে-পালটে দেখছে তোমার মায়া আমার বলতে চরাঞ্চল জুড়ে একা একা আছড়ে পড়ত                       পদ্মা যমুনার ঢেউআমার নিজস্ব ঘরবাড়ি, প্রতিবেশি মানুষের মুখে                        ভয়ে ভয়ে রক্ত উঠে যেতক’দিন মাত্র পর আমি মধ্য পদ্মার ভেতর একমাত্রআশ্রয়ের খুঁটি আঁকড়ে ধরেপ্রবল স্রোতে কাঁপতে কাঁপতে জেনেছি:আমার বলতে আজ পৃথিবীতে অনেক কিছুরই জন্ম হয়েছেএতদিন যা স্ত্রী, সন্তান, ভাইবেরাদরে সীমাবদ্ধ ছিলএই স্রোতে তারাও তো কোথাওআশ্রয়ের খুঁটি আঁকড়ে ধরে আমার মতোই নতুন আনন্দে নাচছেএই পৃথিবীর তাবৎ ভূ-সম্পত্তি- খ্যাত অখ্যাতপ্রিয় পরিজনের অতিথি আজ তারাশুধু আমি ছাড়া এই পদ্মা এই যমুনা তাদের হারানো পৃথিবী ফিরিয়ে দিয়েছেশুধু একটু আধটু কৌতূহলী যারা- ভাঙনের চাঙড় ঠেলেলুকিয়েচুরিয়ে দেখছে আমার মুখপ্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে তোমার দিকে তেড়ে আসছে বুনো বিছুটির শ্বাসযারা তোমার নিজের হৃৎপিণ্ডের ভেতর পালানোর ব্যাপারটিএকপ্রকার নিশ্চিত করেছে, বলা যায়এবার তুমি চাঁদের রন্ধনশালায়- তোমার প্রিয় হাঁসের স্নায়ুকাঁঠালের ঘ্রাণ- নিশ্চিন্তে রান্না করে চেখে নিতে পারোনির্ধারিত কলঙ্কের ওপর চড়িয়ে দিতে পারো তোমার দুরন্ত নৌযানজলের প্রশ্রয় থেকে মাছেদের প্রস্থান প্রশ্নেসামুদ্রিক আইনের ভাষায় ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছেষড়যন্ত্রের শেষে সুগন্ধি ফোয়ারার মুখফোয়ারার প্রতিটি বুদ্বুদ থেকে প্রশ্ন উত্থিত হচ্ছে-কে কেন পালাতে চায়- প্রিয় মুখ, রক্তকরবী ছিঁড়ে লেখক পরিচিতি :ওবায়েদ আকাশের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১৩ জুন, বাংলাদেশের রাজবাড়ী জেলার সুলতানপুর গ্রামে। একাডেমিক পড়াশোনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে দেশের ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা ‘দৈনিক সংবাদ’-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পতন গুঞ্জনে ভাসে খরস্রোতা চাঁদ (বর্তমান সময়, ২০০১), নাশতার টেবিলে প্রজাপতিগণ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), দুরারোগ্য বাড়ি (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৪), কুয়াশা উড়ালো যারা (বিশাকা, ২০০৫), পাতাল নির্মাণের প্রণালী (আগামী, ২০০৬), তারপরে, তারকার হাসি (আগামী, ২০০৭), শীতের প্রকার (বৃক্ষ, ২০০৮), বিড়ালনৃত্য, প্রেতের মস্করা (শুদ্ধস্বর, ২০০৯), যা কিছু সবুজ, সঙ্কেতময় (ইত্যাদি, ২০১০), প্রিয় কবিদের রন্ধনশালায় (ইত্যাদি, ২০১১), রঙ করা দুঃখের তাঁবু (ইত্যাদি, ২০১২), বিবিধ জন্মের মাছরাঙা (দীর্ঘ কবিতার সংকলন, ইত্যাদি, ২০১৩), তৃতীয় লিঙ্গ (দীর্ঘ কবিতার সংকলন, শুদ্ধস্বর, ২০১৩), উদ্ধারকৃত মুখমণ্ডল (বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত নির্বাচিত কাব্য সংকলন, ২০১৩), হাসপাতাল থেকে ফিরে (কলকাতা, উদার আকাশ, ২০১৪), ৯৯ নতুন কবিতা (ইত্যাদি, ২০১৪)। অনুবাদ : ‘ফরাসি কবিতার একাল / কথারা কোনোই প্রতিশ্রুতি বহন করে না’ (ফরাসি কবিতার অনুবাদ, জনান্তিক, ২০০৯)  ‘জাপানি প্রেমের কবিতা/ এমন কাউকে ভালবাস যে তোমাকে বাসে না’ (জাপানি প্রেমের কবিতা, জনান্তিক, ২০১৪)  গদ্যগ্রন্থ : ‘ঘাসের রেস্তরাঁ’ (বৃক্ষ, ২০০৮) ও ‘লতাপাতার শৃঙ্খলা’ (ধ্রুবপদ, ২০১২), চারদিকে উদ্যানের সৌরভ (ধ্রুবপদ, গল্পগ্রন্থ, ২০১৪)। সম্পাদনা গ্রন্থ : ‘দুই বাংলার নব্বইয়ের দশকের নির্বাচিত কবিতা’ (শিখা, ২০১২)।সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন : শালুক (১৯৯৯-)পুরষ্কার ও সম্মাননা: ‘শীতের প্রকার’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম শ্রেষ্ঠ তরুণ কবি পুরষ্কার ২০০৮’; ‘শালুক’ সম্পাদনার জন্য ‘কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র পুরস্কার ২০০৯’। এবং সামগ্রিক কাজের জন্য লন্ডন থেকে ‘সংহতি বিশেষ সম্মাননা পদক ২০১২’।  এইচআর/এমএস

Advertisement