বিশেষ প্রতিবেদন

হাতবদলে আমের দাম সাত গুণ

আড়তে ভরপুর মৌসুমী রসালো ফল আম। দামেও বেশ সস্তা। কিন্তু হাতবদলে দাম বাড়ছে ছয় থেকে সাত গুণ। পাইকারি বাজারের ১০ টাকা কেজির আম খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। ফলে এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর ফলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার বাদামতলীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে আমের অভাব নেই। পাইকাররা হাকডাক দিয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন। এমনই একজন পাইকার মো. ইব্রাহীম। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বাদামতলীর ঘাটে ব্যবসা করছেন তিনি।

আমের দাম সম্পর্কে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবার আমের দাম পানির মতো। ১০ টাকা কেজি। গত ১০ বছরে আমের এত কম দাম দেখিনি। পাইকারি দরে প্রতিকেজি ল্যাংড়া আমের দাম মানভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকা, হিমসাগর ৮ থেকে ১০ টাকা, ভালো মানের হিমসাগর ১২ থেকে ২০ টাকা, ফজলি ১৫ থেকে ২০ টাকা, আম্রপালি ১৫ থেকে ২৮ টাকা, ভোগলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তিনি বলেন, এবার আমের ফলন বেশি হয়েছে। এছাড়া ঈদের পর বাজারে ক্রেতা কম। সবমিলিয়ে দামে খরা। তবে এর চেয়ে আমের দাম আর কম হবে না।

Advertisement

বিগত ৮ থেকে ১০ বছরের তুলনায় এবার আমের দাম সবচেয়ে কম- পাইকাররা এমন জানালেও উল্টো চিত্র রাজধানীর খুচরা বাজারে। বাদামতলী পাশেই বাবুবাজার, নয়াবাজার ও আরমানিটোলা এলাকায় খুচরা বিক্রেতারা আম বিক্রি করছে ছয় থেকে সাতগুণ বেশি দামে। এসব এলাকায় প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। অথচ পাইকারি বাজারে এই আমের দাম ১২ থেকে ১৮ টাকা। খুচরা বাজারে ফজলি ও ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আম্রপালি ৭০ থেকে ৯০ টাকা। পাইকারি বাজারে এসব আমের দাম ১৫ থেকে ২৫ টাকা।

পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরার দাম এতো বেশি কেন জানতে চাইলে আরমানিটোলার খুচরা ফল ব্যবসায়ী হারুন জানান, পাইকারদের তুলনায় খুচরা বিক্রেতাদের খরচ বেশি। গাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিভিন্ন চাঁদা সব খরচ হিসাব করেই ব্যবসা করতে হয়। আমরা পাইকারি বাজার থেকে গড়পড়তায় আম কিনি। এরপর বাছাই করে বিক্রি করি। এছাড়া অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়, সব মিলিয়ে দাম ঠিক করতে হয়। তাই পাইকারদের তুলনায় দাম বেশি। পাইকারি বাজারে এক কেজি ৩০ টাকা হলে দোকানে আনতে আনতে ৪০ টাকা পড়ে যায়। এরপর বাছাই করে নষ্ট আম বাদ দিয়ে হিসাব করলে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পড়ে যায়। ওই আম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি করি।

এদিকে রাজধানীতে এলাকাভেদে আমের দামের বিশাল ফারাক রয়েছে। ওয়ারীতে যে আম কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। একই আম মতিঝিল খিলগাঁওয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। আর রামপুরা, মুদগা ও টিকাটোলী এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।

মতিঝিলে শাপলা চত্বর এলাকায় প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি করছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। ফজলি, ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

Advertisement

মুগদায় হিমসাগর কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছে। ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মান বেধে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। ফজলি আম বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

এদিকে কমলাপুর, মুগদা, মানিকনগর এলাকায় রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে তুলনামূলক কম দামে আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। এসব জায়গায় ভ্যানে প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি করছে ৫০ টাকা। ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

মতিঝিলের আম ক্রেতা ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দীন বলেন, এখান একসঙ্গে অনেক দোকান তাই দেখে দেখে ভালো আম কেনা যায়। এজন্য এখান থেকে সব সময় আম কিনি। আজকে পাঁচ কেজি ল্যাংড়া আম কিনেছি ৩৫০ টাকায়। আমের দামে কেমন জানতে চাইলে এই ক্রেতা বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখি এবার আমের দাম কম। রাজশাহীতে নাকি আমের কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা। কিন্তু আমরা ভোক্তারা তো বেশি দামেই আম কিনছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে সব সময় সাধারণ মানুষের মরে। কৃষক উৎপাদন করে মূল্য পায় না। আবার আমরা ভোক্তারা কম দামে জিনিস পাই না। সব ভোগ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা।

এসআই/এমবিআর/জেআইএম