দেশজুড়ে

পর্যাপ্ত সুবিধা বঞ্চিত শরীয়তপুরের প্রতিবন্ধীরা

পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় শরীয়তপুরে মানবেতর জীবন কাটছে অসহায় প্রতিবন্ধীদের। সরকারিভাবে কিছু সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। অর্থ স্বল্পতার কারণে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠনগুলো।জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও বিভিন্ন এনজিও সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের জরিপ অনুযায়ী জেলার ৬টি উপজেলায় ১৩ হাজার ১শ ৭৮ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন। তবে চিকিৎসকদের সনদ অনুযায়ী ১১ হাজার ৩৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেছে সমাজসেবা কার্যালয়। প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য জেলা সদরে একটি প্রতিবন্ধী ফিজিওথেরাপি সেন্টার রয়েছে। তবে বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে মাত্র ৫২ জনকে সেখান থেকে থেরাপি সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধীদের মাঝ থেকে ৩ হাজার ৬শ ৬৮ জনকে মাসিক ৫শ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ২৩৬ জনকে ৩শ টাকা করে, ১৭২ জনকে ৪৫০ টাকা করে, ৪৯ জনকে ৬শ টাকা করে এবং ৮ জনকে ১ হাজার টাকা করে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধীদের ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা আছে। তবে জেলায় বিপুল সংখ্যক প্রতিবন্ধী থাকলেও তাদের  লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের জন্য সরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও স্কুল নেই। তবে জেলার ডামুড্যা উপজেলায় এনজিও কর্তৃক পরিচালিত একটি স্কুল রয়েছে।শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৩টি এনজিও বর্তমানে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করছে। এসব এনজিওগুলো প্রতিবন্ধীদের মাঝে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ, যেমন হুইল চেয়ার, লাঠি, চশমা প্রভৃতি বিতরণ করে থাকে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে থাকে। জেলার ডামুড্যা উপজেলায় বেসরকারি সংগঠন ডামুড্যা মহিলা উন্নয়ন সোসাইটি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী স্কুল নামে একটি স্কুল পরিচালনা করছে। সেখানে মাত্র ৬০ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে।প্রতিবন্ধী জাবের হোসেন আদরের বাবা বজলুর রশীদ সিকদার জাগো নিউজকে বলেন, আমি একটি বেকারির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করি। আমার ছেলেকে যে ভাতা দেয় তা দিয়ে তার চিকিৎিসা ও শিক্ষার খরচ কোনোভাবেই সম্ভব হয় না।প্রতিবন্ধী আশরাফুল ইসলামের বাবা শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, আমি আমার ছেলেকে থেরাপি দেওয়ার জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর থেকে জেলা সদরে আসি। প্রতিবার যাতায়াতে প্রায় ২শ টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে এই খরচ বহন করতে অনেক কষ্ট হয়। প্রতিবন্ধী সীমান্তর মা পলি রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্বামী নেই। আমার বাবা হারা সন্তানকে কোনো ভাতা দেওয়া হয় না। ডামুড্যা মহিলা উন্নয়ন সোসাইটির (ডিএমইউএস) নির্বাহী পরিচালক আবদুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ডামুড্যায় প্রায় ২০ জন প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়েছি। আমাদের তহবিল সঙ্কট থাকায় পর্যাপ্ত সেবা সম্ভব হচ্ছে না।বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব মেমোরিয়াল প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের সবক্ষেত্রেই অবহেলিত। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্য প্রতি উপজেলায় অন্তত একটি করে স্কুল, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও থেরাপি সেন্টার স্থাপন করা উচিত। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজন বিবেচনা করে নামমাত্র ভাতা না দিয়ে যৌক্তিক ভাতা দেয়া উচিত।শরীয়তপুর জেলা সমাজ সেবা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. মানুয়ার মাহমুদ মিয়া জাগো নিউজকে জানান, প্রতিবন্ধী ভাতা আগের থেকে একটু বাড়ানো হয়েছে। ভাতা প্রাপ্ত প্রতিবন্ধীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ানো হবে। এমজেড/এমএস

Advertisement