বিশেষ প্রতিবেদন

‘১শ’ টাকা বেশি কন? কয়দিন পর ২৫০ টাকা দাম অইবো’

‘১শ’ টাকা কেজি বেশি কন? কয়দিন পর এই হিমসাগরের কেজি অইবো ২৫০টাকা। আমদানি বেশি দেইখ্যা এই দামে কিনতে পারতাছেন।’

Advertisement

সোমবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট পোস্ট অফিসের অদূরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হোস্টেলের (চারুকলা অনুষদের হোস্টেল) সামনে ফুটপাথে স্থাপিত ‘ফরমালিনমুক্ত আম মেলা’র দোকানি এক ক্রেতাকে উদ্দেশে করে একথাগুলো বলছিলেন।

ক্রেতা ৯০ টাকা কেজি দাম বলে সামনে এগিয়ে যেতেই দোকানি ডেকে বলেন, ‘নেন এই দামেই দিলাম। বাজারে আম বেশি তাই কদর কম। পাকা আম রাইখ্যা দিলে পইচ্যা যায়। তাই এই দামে দিয়া দিলাম।’

ফুটপাত থেকে অভিজাত শপিং মল সর্বত্র ভরপুর আমের বাজার। হিমসাগর, ল্যাংড়া, গুটি, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, ক্ষিরসাপাতি, গোপালভোগ, কাঁচামিঠা, দুধসাগর, গোবিন্দভোগসহ কত বাহারি নামের আম উঠেছে বাজারে। পর্য়াপ্ত সরবরাহ থাকায় ধনী-গরীব সকলেই মিষ্টি আমের মধুর রসের স্বাদ চেখে দেখতে পারছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘ফরমালিনমুক্ত আম’ নাম দিয়ে আমের মেলা বসেছে।

Advertisement

সোমাবার রাজধানীর বাবুবাজার আমের আড়ত ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে আমের দামের বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। আড়তে বিভিন্ন প্রজাতির আমের কোনোটাই ৩০ থেকে ৪০ টাকার বেশি বিক্রি না হলেও একই আম এলাকা ও বাজারভেদে দুই থেকে তিনগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

পাড়া-মহল্লার দোকানিরা বলছেন, আড়ত থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে আনলেও পাকা আমে দ্রুত পচন ধরে যাওয়ায় তারা কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।

আজিমপুর নতুন পল্টন লাইন এলাকার আল হেরা জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় টুকরিতে করে নিয়মিত মৌসুমী ফল বিক্রি করেন চান মিয়া। সোমবার রাতে তার কাছে হিমসাগর আমের কেজি জানতে চাইলে তিনি ৮০ টাকা কেজি দাম হাঁকেন। বাবুবাজার আড়তে হিমসাগরের কেজি মাত্র ৩৫ টাকা বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘নবাবগঞ্জ আড়ত থেকে আজ সকালেই ৫৮ টাকা কেজি দরে কিনে এনেছি।’ বাবুবাজারের আমের কোয়ালিটি হয়তো ভাল নয়, তাই সেখানে দাম কম হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সোমবার রাত পৌনে ১০টায় আজিমপুর কবরস্থানের সামনে একজন রিকশাচালককে ৬০ টাকায় এক কেজি ল্যাংড়া আম কিনতে দেখা যায়। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোসলেম উদ্দিন নামে ওই রিকশাচালক জানান, তিনি সপরিবারের কামরাঙ্গীরচর মাতব্বর বাড়ি এলাকায় থাকেন। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার দশ বছর বয়সী মেয়ে মিষ্টি দেখে আম নিয়ে যেতে বলেছে। তাই এক কেজি আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দাম বেশি না কম জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, ‘আমাগো মতো গরিবের লাইগ্যা ৬০ টাকা কেজিও বেশি।’ তবে মেয়ের শখের কাছে এ দাম বেশি না বলে সামনে এগিয়ে যান তিনি।

Advertisement

সরেজমিন পাইকারি-খুচরা বাজার, ফুটপাত-শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে সস্তা দামে আম কিনতে চাইলে আড়ত থেকে আম কেনার বিকল্প নেই। পরিমাণে একটু বেশি কিনলে নগরীর ছোটবড় যেকোনো বাজারের চেয়ে আমভেদে অর্ধেকেরও কম দামে কেনা সম্ভব।

এমইউ/এমবিআর/আরআইপি