বিশেষ প্রতিবেদন

লাভ তো দূরের কথা পুঁজি নিয়েই শঙ্কিত আম বেপারীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দায়পুকুরিয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী ইন্তেজা আলম চলতি বছর ১ হাজার ৫শ’ টাকা মন দরে ১০/১২টি বাগানের আম কিনেছিলেন। এবার ভাল ফলন হওয়ায় বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন তিনি। আশা ছিল বাগান থেকে ঢাকার পাইকারি বাজারে এনে হিমসাগর আম প্রতি কেজি কমপক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও লক্ষণভোগ ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু ঢাকার বাজারে হিমসাগর ৩০ থেকে ৩২ টাকা ও লক্ষণভোগ ১৫ থেকে ১৬ টাকা দামের বেশি বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। আম পচনশীল হওয়ায় বিক্রি না করে ধরে রাখলে আরও কম দামে বিক্রি করতে হবে তা অনুধাবন করতে পেরে আড়তদারদের মাধ্যমে দ্রুত আম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

Advertisement

সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাদামতলীতে রুবিনা এন্টারপ্রাইজ আড়তে বসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ইন্তেজা আলম বলছিলেন, ‘এখন আর লাভের আশা করছি না, যে টাকা বিনিয়োগ করেছি তা উঠবে কিনা তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি। গত কয়েকটা মাস যে খাটুনি করলাম তা বিফলে গেল।’

ইন্তেজা আলমের মতো আরও কয়েকজন আম ব্যবসায়ী চলতি বছর পুঁজি হারানোর আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে বাদামতলীর বিভিন্ন আড়তে হিমসাগর, লক্ষণভোগ, বুগলাগুটি, ল্যাংড়া, রূপালী ও গুটি আমসহ বিভিন্ন ধরনের আমের ছড়াছড়ি। আড়তের ভেতরে ও বাইরে পাকা আমের মৌ মৌ গন্ধ। বাজারে আমের ছড়াছড়ি থাকলেও পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা কম। অন্যান্য বছর পাইকারি আড়তে আম কেনাবেচায় ক্রেতা বিক্রেতার দর কষাকষির যে স্বাভাবিক দৃশ্য চোখে পড়ে আজ তাও চোখে পড়েনি। ক্রেতার চেয়ে আড়তদারের সংখ্যাই বেশি।

Advertisement

বাজারে আম ভেদে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ১০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হিমসাগর ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লক্ষণভোগ ১২ টাকা থেকে ১৮ টাকা, বুগলাগুটি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, ল্যাংড়া ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গুটি আম ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা ও রূপালী আম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়ত ও আম ভেদে দামের তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি ক্যারেটে (প্লাস্টিকের বাক্সে সাজানো) ২০ থেকে ২৫ কেজি আম ওজন করে বিক্রি করা হচ্ছে।

রুবিনা এন্টারপ্রাইজের মালিক ওসমান হাওলাদার জানান, বাজারে প্রচুর আম উঠেছে। কিন্তু পাইকারি ক্রেতা নেই। ফলে আমের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়’ -এমন কথা বলে মিডিয়া আম ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি করেছে।

হাসান নামের আরেকজন পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, ঈদ পরবর্তী সময়ের কারণে মানুষ এখনও সেভাবে আম কিনে খাওয়া শুরু করেনি। সপ্তাহখানেক পরেই বেতন-ভাতা পেয়ে মানুষ আম কেনা শুরু করবে। তখন আমের দামও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এমইউ/এমবিআর/পিআর

Advertisement