সফর বা ভ্রমণকারীর জন্য মহান আল্লাহ তাআলা অনেক অনুদান ও সাদাকা ঘোষণা করেছেন। ইসলামের বিধি-বিধান পালনে তাদের জন্য অনেক কিছুকেই তিনি সহজ করে দিয়েছেন। যাতে তারা ইসলামের কোনো বিধি-বিধানকেই নিজেদের জন্য কষ্টকর মনে না করেন।
Advertisement
তবে অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ সফর করলে তার জন্য সফরের কোনো হুকুম বা বিধান যেমন প্রজোয্য হবে না তেমনি সফরকারীর জন্য ঘোষিত কোনো অনুদান বা সাদাকাহও সে লাভ করবে না।
আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি জুলুম করেন না বরং তিনি বান্দার প্রতিটি পদে পদে অগণিত ইহসান করেছেন। আর বান্দা যদি মুসাফির হয় তবে তার জন্য রয়েছে অনেক বেশি অনুদান ও পুরস্কার।
আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য নামাজে ছাড় দিয়েছেন। সফর অবস্থায় ৪ রাকাআত বিশিষ্ট নামাজকে ২ রাকাআত করে দিয়েছেন। যাতে বান্দার কষ্ট না হয়।
Advertisement
আবার সফর অবস্থায় বান্দার জন্য রমজানের ফরজ রোজা না রাখারও অনুমতি রয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে আদায় করে নিলেই হয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে নামাজ ও রোজা প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন-
- তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে তখন নামাজ সংক্ষিপ্ত (কছর) করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই। আর অবিশ্বাসীগণ তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০১)
- রমজান মাস, এতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন। যা মানুষের জন্য সৎ পথে স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী। অতএব তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন তাতে রোজা পালন করে। আর যে অসুস্থ বা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। যেন তোমরা (রোজার) নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর তাকবির পাঠ (মহিমা বর্ণনা) কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
উল্লেখিতে আয়াতে কারিমার আলোকে বুঝা যায়, বান্দার প্রতি মহান আল্লাহ তাআলা অনেক অনুগ্রহশীল। তিনি বান্দাকে সফর অবস্থায় নামাজের বিধান কমিয়ে দিয়েছেন। আবার ফরজ রোজায় ছাড় দিয়েছেন; যাতে সফর অবস্থায় বান্দার কষ্ট না হয়।
Advertisement
হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার এ ছাড় দেয়াকে সাদাকাহ ও অনুদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আরও পড়ুন > দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়
হজরত ইয়ালা ইবনে উমাইয়া বলেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, (আল্লাহ বলেন) ‘নামাজকে সংক্ষিপ্ত (কছর) করে আদায় করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই; যদি ভয় কর যে, যারা কাফের (অবিশ্বাসী) তারা তোমাদেরকে ফেৎনায় ফেলতে পারে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০১)
তখন তিনি (হজরত ওমর) বললেন, তুমি যেমন আশ্চর্য হচ্ছ; আমিও তেমনি আশ্চর্য হয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উত্তরে তিনি (বিশ্বনবি) বলেন, ‘ইহা একটি দান; যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি (রহমতস্বরূপ) দান করেছেন। অতএব আল্লাহর অনুদান কবুল করে নাও।’ (মুসলিম)
শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি মুসাফিরের দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সফর অবস্থায় সে যে দোয়া করে আল্লাহ তাআলার তার সে দোয়াই কবুল করে নেন।
মনে রাখা জরুরিআল্লাহ তাআলার এ অনুগ্রহ লাভের নির্ধারিত সীমা রয়েছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে নির্ধারিত দূরত্ব অতিক্রম না করলে সফরের এ বিধান বান্দার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
সফরের নির্ধারিত সীমা রয়েছে। যা অতিক্রম করলেই তার ওপর মুসাফিরের হুকুম চলে আসবে। আবার সফরে বের হওয়ার পর অবস্থানের দিনক্ষণও নির্ধারিত রয়েছে।
মুসাফিরের হুকুমকসরের নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। বান্দার সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখেই আল্লাহ এ বিধান জারি করেছেন।
যদিও বাহ্যিকভাবে দেখা যায় ৪ রাকাআত নামাজকে ২ রাকাআত করা হয়েছে। তাতে সাওয়াব কমে যাবে এ আশংকা করার কোনো কারণ নেই। আল্লাহর কাছে মুসাফিরের ২ রাকাআত নামাজই ৪ রাকাআত হিসেবে পরিগণিত হবে।
- ইসলামি শরিয়তে কোনো ব্যক্তি যদি সর্বনিম্ন ৪৮ মাইল বা তার বেশি দূরত্বে সফরে বের হয় এবং ১৫ দিনের বেশি সময় অবস্তানের নিয়ত না করে তবে সে মুসাফির। তার জন্য নামাজ ও রোজার উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য।
- এ সফরে যদি কেউ রোজা রাখতে সক্ষম হয় তবে তার জন্য রোজা রাখায় যেমন বাধা নেই; তেমনি রোজা ভাঙায় কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ কষ্ট না হলে সে ইচ্ছা করলে রোজা রাখতে পারে।
- তবে রোজার মতো নামাজের ক্ষেত্রে কোনো ছা নেই। ব্যাপারে সে ৪ রাকাআত ফরজ নামাজগুলোকে অবশ্যই ২ রাকাআত কছর আদায় করবে। তাতে কোনো ছাড় নেই।
- মুসাফির যদি নামাজের ইমামতি করে তবে মুক্তাদিদের আগেই জানাবে যে, সে মুসাফির। তাহলে ইমামের সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি মুসাফির না হলে বাকি নামাজ আদায় করে নেবে।
- মুসাফির অবস্থায় যদি কারো জোহর, আসর এবং ইশার নামাজ কাজা হয় এবং বাড়ি চলে আসে তবে সে কাজা আদায়ের ক্ষেত্রেও কছর ২ রাকাআত আদায় করবে।
- যদি কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে মুসাফির সাজে তবে ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হিসেবে পরিগণিত হবে না আর মুসাফির পরিগণিত না হলে তার ওপর কছরের হুকুমও প্রযোজ্য হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুসাফির অবস্থায় নামাজ ও রোজার হুকুম যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। মুসাফিরের জন্য ঘোষিত মহান আল্লাহ অনুগ্রহ ও সাদাকাহ লাভের তাওফিক করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর