অপহরণকারীদের চাওয়া মুক্তিপণের টাকা প্রদান করেও অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে অন্তরকে জীবিত পেলেন না মা। নিখোঁজের ২০ দিন পর মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ফরিদপুরের তালমা ইউনিয়নের পাগলপাড়া গ্রামের মাঠ থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অন্তরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
Advertisement
অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের পর কোনো সান্ত্বনাই থামাতে পারেনি স্বজনদের কান্না। একটাই দাবি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। অপহরণকারী খোকনের পরকীয়া দেখে ফেলায় অপহরণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ৭ জুন তারাবি নামাজ এর জন্য বাড়ি থেকে বের হলে নিখোঁজ হয় তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও পাগলপাড়া গ্রামের গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেনের ছেলে আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর (১৪)।
পরদিন রাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অন্তরের মা জান্নাতী বেগমের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পুলিশের সহায়তায় অপহরণকারীদের কথামতো নির্ধারিত স্থানে টাকা রাখা হলে পুলিশের সামনেই টাকা নিয়ে যায় অপহরণকারী চক্রের দু’সদস্য। ছেলেকে ফেরত পাবার আশায় টাকা নিতে বাধা না দিলেও ফেরত আসেনি ছেলে অন্তর।
Advertisement
এদিকে মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ খোকন, শাহ আলম ও সুজন নামের তিনজনকে আটকের পর মঙ্গলবার আটক করা হয় মাহবুব আলম নামের অপর একজনকে। তার দেয়া তথ্যানুসারে পাগলপাড়া গ্রামের নির্জন একটি মাঠ থেকে মাটিতে পুঁতে রাখা অন্তরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান জানান, পুলিশ অন্তর অপহরণ মামলার আসামি মাহাবুব আলমকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অন্তরকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে সে। তার দেখানো জায়গা থেকেই অন্তরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, অপহরণের পর ওই রাতেই অর্থাৎ ৮ জুন রাতেই গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে অন্তরকে হত্যা করা হয়। পরে পাগলা পাড়া গ্রামের রাস্তার পাশে খাদে মাথা নিচ দিকে দিয়ে পুতে রাখে অন্তরকে।
হত্যার কারণ হিসেবে আটকদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, আসামি খোকনের সঙ্গে অন্তরের পরিবারের পারিবারিক ঝামেলা ছিল। মামলাও চলছিল এ নিয়ে। এবং খোকনের পরকীয়া ছিল গ্রামের এক নারীর সঙ্গে। খোকন ও ওই নারীকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে অন্তর। এছাড়া অপর এক আসামির মেয়ের সঙ্গে অন্তরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
Advertisement
সব আসামি মিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে স্কুলছাত্র অন্তরকে হত্যা করে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, এটি কোনো অপহরণ কিংবা মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ছিল না। হত্যার উদ্দেশ্যেই অন্তরকে অপহরণ করেছিল তারা।
মুক্তিপণ নেয়ার ব্যাপারে এই কর্মকর্তা জানান, হত্যা করার প্রায় ৭ দিন পরে এরা ভাবে মেরেই তো ফেলেছি, দেখি কিছু টাকা পয়সা আদায় করা যায় কীনা। সেই ভাবনা থেকেই এরা মুক্তিপণের টাকা চায়। যা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে তারা।
এদিকে লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পরলে পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতরণ হয় সেখানে। পরিবারের একটাই দাবি এখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অন্তরের হত্যাকারীদের।
প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন তারাবি নামাজ পরতে গিয়ে নিখোঁজ হন তালমা নাজিম উদ্দিন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে অন্তর। এর পরে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অন্তরের মাকে মোবাইল করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। ১৪ জুন রাতে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকাও দেয় অন্তরের মা। কিন্তু এর পরেও ছেলের মুক্তি মেলেনি।
এমএএস/পিআর