দেশজুড়ে

দলে দলে হাসিমুখে

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি ছাড়া বাকি কেন্দ্রগুলোতে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ চলছে। টঙ্গীর শফি উদ্দিন একাডেমি, জয়দেবপুর শিববাড়ীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, কোনাবাড়ী অঞ্চলের বাইমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাালয়, লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, আলহাজ মহরম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও চান্দনা চৌরাস্তা স্কুলসহ আরও বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

Advertisement

নারী-পুরুষ দলমত নির্বিশেষে সবাই সকাল থেকে দলে দলে হাসিমুখে ভোটকেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন।

তবে সকাল ১০টার দিকে নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের মুগর খাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র দখলে নেন নৌকা প্রতীকের লোকজন।

জানা যায়, ওই কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। পরে তারা কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট নিয়ে নৌকা মার্কায় সিল মারতে থাকেন। ফলে ওই কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সংকট দেখা দেয়। কেন্দ্রের বাইরে ভোটাররা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও ব্যালট পেপার না থাকায় সেখানে ভোটগ্রহণ থেমে যায়।

Advertisement

রাজধানী সংলগ্ন হওয়ায় দেশসহ আন্তর্জাতিক মহলের চোখও রয়েছে এই নির্বাচনের দিকে। নির্বাচনে কোন দল বিজয়ী হবে সেটা দেখার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন জাতিকে কেমন নির্বাচন উপহার দেয় সেটাই দেখার অপেক্ষায় মানুষ।

গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। সেবার নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও এবার হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। তাই নৌকা প্রতীক নিয়ে গাজীপুরে নিজেদের প্রার্থীকে মেয়র হিসেবে দেখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি ভোটে বিজয়ী হওয়ার আশা ধানের শীষের প্রার্থীর।

জাতীয় সংসদের গাজীপুর-১, ২ ও ৩ নং আসনের কিছু কিছু অংশ নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা গঠিত। সিটি কর্পোরেশনের মোট ওয়ার্ড ৫৭টি। মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। আর ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২৫টি।

স্থানীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাকি ৮৮টি কেন্দ্র সাধারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রের জন্য ২২ জন করে সশস্ত্র পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া থাকবে পুলিশের টহল দল ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। সব মিলিয়ে ভোটের দিন প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করবেন।

Advertisement

নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীকে তাৎক্ষণিক সাজা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কেন্দ্রে একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। অপরদিকে ১৯টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১০টি র্যাবের টহল টিম এবং ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন রয়েছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, ৯ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ৫৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও সংরক্ষিত আসনে ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি এবং অতিরিক্ত একটিসহ মোট ৫৮টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি দুইটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। এদের মধ্যে ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় এবং ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে।

এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৮ হাজার ৭০৮ জন। এছাড়া ভোটার সচেতন এবং শিক্ষিত ও শহরকেন্দ্রিক ৬ কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে(ইভিএম) ভোট নেয়া হচ্ছে। যান্ত্রিক জ্ঞান-সম্পন্ন মানুষ যাতে বুঝে-শুনে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য নগরীর ওই দুটি ওয়ার্ডকে বেছে নেয়া হয়েছে।

এই নির্বাচনে ৬ জন দলীয়সহ ৭ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন সাধারণ প্রার্থী ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।

এফএইচ/এমএএস/এফএ/জেআইএম