দিয়েগো ম্যারডোনা কি তবে জ্যোতিষি? বিশ্বকাপ শুরুর আগেই তিনি মন্তব্য করে বসেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনার এই দল প্রথম রাউন্ড পার হতে পারবে না।’ এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে যা অবস্থা, তাতে ম্যারাডোনাকে সমর্থকরা একজন ভবিতব্য নির্দেশক হিসেবে গণ্য করে নিতেই পারেন।
Advertisement
যদিও অক্টোপাস, বিড়াল কিংবা উটের মত একটাকে বেছে নিলাম আর কাকতালীয়ভাবে সেই দলটাই জিতে গেলো- ম্যারাডোনা এমনটা করেননি। তিনি বিশ্লেষণ করেছেন, সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে। দলের আভ্যন্তরীন কী অবস্থা, সে অনুযায়ী মাঠে প্রায়োগিক দিকটা কেমন হবে- সব কিছুই ছিল সেই বিচার-বিশ্লেষণে। ম্যারাডোনার মন্তব্য তাই ফেলে দেয়ার মতো ছিল না।
বিশ্বকাপ শুরুর পর ম্যারাডোনার কথার প্রতিফলনই যেন ঘটাচ্ছিলেন মেসিরা। আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র, পরের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত। বিশ্বকাপে সর্বশেষ ৬০ বছরেও এতটা বাজে শুরু করেনি আর্জেন্টিনা। বিশেষ করে দলটির এতটা হতশ্রী অবস্থা, আগে থেকেই আশা হারিয়ে ফেলা ম্যারাডোনাকেও বিধ্বস্ত করেছে। গ্যালারিতে দেখা গেছে তার চোখে অশ্রু। এতটা বিপর্যয় বোধকরি, তিনি কল্পনাই করতে পারেননি।
দুই ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট। তবুও সম্ভাবনা টিকে আছে আর্জেন্টিনার। শেষ ম্যাচটা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে। লিওনেল মেসিদের সামনে রীতিমত অগ্নি পরীক্ষা। পয়েন্ট টেবিলের বিচারে আর্জেন্টিনার চেয়ে এগিয়ে নাইজেরিয়া। আইসল্যান্ডকে হারিয়ে তাদের ঝুলিতে ৩ পয়েন্ট। যদিও তারা হেরেছে ক্রোয়েশিয়ার কাছে। কিন্তু, আইসল্যান্ডের বিপক্ষে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে আহমেদ মুসা আর জন অভি মিকেলরা, তাতে আর্জেন্টিনার জন্য অশনি সঙ্কেতই অপেক্ষা করছে।
Advertisement
নাইজেরিয়া বরাবরই আর্জেন্টিনার জন্য কঠিন পরীক্ষা। যদিও পরিসংখ্যান বলছে নাইজেরিয়ার চেয়ে ঢের এগিয়ে আর্জেন্টাইনরা। এর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে চারবার সুপার ঈগলদের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। যার প্রতিটিতেই জিতেছে আর্জেন্টাইনরা। সে পরিসংখ্যানকে বিবেচনায় আনলে, এই ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষেও এগিয়ে লিওনেল মেসিদের দল।
কিন্তু তবুও কথা থেকে যায়। সর্বশেষ দু’দলের মুখোমুখি অবস্থান আর্জেন্টিনার জন্য শঙ্কা জাগানিয়া। কারণ, সর্বশেষ দু’দলের মুখোমুখি আর্জেন্টিনার জালে ৪ বার বল প্রবেশ করিয়েছিল নাইজেরিয়ান ফুটবলাররা। তারওপর, নাইজেরিয়া দলে রয়েছেন আহমেদ মুসা। যিনি বলে-কয়ে গোল করতে পারেন। গত বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশ।
ওই ম্যাচের আগে নাইজেরিয়ার মুসা ঘোষণা দিয়েছিলেন গোল করবেন এবং তিনি জোড়া গোল করেছিলেন। যদিও আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৩-২ গোলে। এবার সেই মুসা রয়েছেন নাইজেরিয়া দলে এবং রয়েছেন দারুণ ফর্মে। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করেণে তিনি। এবারও কী তবে মুসা আতঙ্ক হয়ে উঠবেন আর্জেন্টিনা রক্ষণে!
যদিও নাইজেরিয়াকে নিয়ে ভাববার আগে আর্জেন্টিনাকে ভাবতে হচ্ছে নিজেদের আভ্যন্তরীন অবস্থা নিয়ে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দলের যে হতশ্রী অবস্থা দেখা গেছে, তাতে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। গোলরক্ষক কাবায়েরোকে যে আর কখনও আর্জেন্টিনা পোস্টের নিচে দেখা যাবে না তা হলফ করে বলা যায়। তার পরিবর্তে পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব বর্তাতে পারে আরমানির ওপর।
Advertisement
কিন্তু মিডিয়ার খবর, কোচ হোর্হে সাম্পাওলির ওপর মোটেও সন্তুষ্ট নয় আর্জেন্টিনা ফুটবলাররা। মেসি-আগুয়েরোরা কোনোভাবেই চান না সাম্পাওলি আর্জেন্টিনার ডাগআউটে থাকুক। এমনকি আগুয়েরো তো প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছেন, ‘কী করতে চান সাম্পাওলি? তিনি সেটা আমাদের জানিয়ে দিক!’ এমন পরিস্থিতিতে দলের মধ্যে অন্তর্কলহ থাকা মানেই বিশাল বিপদ। সেটা টের পেয়েই হয়তো, মেসি শান্তির ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, সাম্পাওলিকে দলে থাকতে। কারণ, তিনি জানেন এই মুহূর্তে পরিবর্তন কতটা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে, আর্জেন্টিনার বিপক্ষে যে দলকে পূর্ণ ঢেলে সাজানো হবে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
যদিও নাইজেরিয়া কোচ গার্নট রোর হুঙ্কার দিয়ে রেখেছেন। আর্জেন্টিনাকে হারাতে চান। তাদের সে সামর্থ্য আছে বলেও জানিয়ে রাখলেন নাইজেরিয়ার কোচ। নাইজেরিয়ার আহমেদ মুসাও হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন স্কোর করার। নাইজেরিয়ানদের সঙ্গে জয় ছাড়া কোনো বিকল্পই খোলা নেই মেসিদের সামনে। ড্র করলেও বিদায় নিতে হবে।
সত্যিই কী নাইজেরিয়া থমকে দেবে আর্জেন্টিনাকে? সত্যিই কী সুপার ঈগলদের হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারবে না লা আলবিসেলেস্তারা? ২০০২ সালের পর কি আবারও গ্রুপ পর্বে বিদায়ের লজ্জায় পড়তে হবে? মঙ্গলবার রাত ১২টায় সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে উত্তর মিলবে এসব প্রশ্নের।
আইএইচএস/আরআইপি