জাতীয়

সৌদি সরে যাওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নেই হচ্ছে মডেল মসজিদ

* অর্থ দেবে না সৌদি আরব* প্রকল্পে আনা হচ্ছে সংশোধনী

Advertisement

২০১৬ সালের জুনে সৌদি আরব সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে সৌদি বাদশাহর কাছে বাংলাদেশে জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিককেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস দেন সৌদি বাদশাহ। এই আশ্বাসেই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার, যার সিংহভাগ সৌদি আরব দেবে বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু বছর পেরোতেই সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে সৌদি। দেশটি এক পয়সাও দেবে না। ফলে প্রকল্প অনুমোদনের পরের বছরেই বাধ্য হয়ে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পরিকল্পনা কমিশনে এ প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছে গণপূর্ত অধিদফতর। আগামীকাল মঙ্গলবার এর সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশব্যাপী নেয়া এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের এপ্রিলে। ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সহায়তা দেয়ার কথা ছিল সৌদি আরবের। বাকি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি)। প্রকল্পের এক বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতির কোনো পয়সা ছাড় করেনি সৌদি। ভবিষ্যতে আর অর্থ ছাড়ও করবে না। তাই প্রকল্প সংশোধন করে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এসব মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

Advertisement

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ জমাদ্দার বলেন, মডেল মসজিদ প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পে সৌদি আরব অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও দেয়নি। ভবিষ্যতেও এ অর্থ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, সব মসজিদই নির্মাণ হবে। ডিজাইনেরও পরিবর্তন হবে না। নির্দিষ্ট মেয়াদেই এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তবে এসব নির্মাণে সরকারের নিজস্ব অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের এপ্রিল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। চলতি অর্থবছর প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ রয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু এই অর্থ তেমন ব্যয় করা হয়নি। এই অবস্থায় প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। এতে প্রকল্পের কাজে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কিছু বরাদ্দও কমানো হচ্ছে।

কমিশন জানায়, মূল প্রকল্পে মসজিদগুলোতে লিফটের ব্যবস্থা ছিল। সংশোধিত প্রকল্পে তা আর থাকছে না। তবে লিফট স্থাপনের জন্য ফাঁকা জায়গা রাখা হবে। পরবর্তীতে কোথাও থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত হলে এসব মসজিদে লিফট স্থাপন করা হবে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা কমে যাচ্ছে।

Advertisement

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সংশোধিত এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের অধীনে প্রথম দফায় ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে ১০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করার কথা রয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করবে গণপূর্ত অধিদফতর।

প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি জেলা সদর ও পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে চারতলাবিশিষ্ট এবং ৪৭৫টি উপজেলা সদরে তিনতলাবিশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উপকূলীয় ১৬টি এলাকায় নিচতলা ফাঁকা রেখে চারতলাবিশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিককেন্দ্র করা হবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রক্রিয়াধীন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিককেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন রকমের নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিককেন্দ্রের নিচতলায় দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে। এসব মসজিদে মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ নারী নামাজ পড়ার সুবিধা পাবেন।

মসজিদ কমপ্লেক্সে ৩৪ হাজার পাঠকের জন্য পাঠাগার সুবিধা রাখা হয়েছে। এসব পাঠাগারে প্রতিদিন ছয় হাজার ৮০০ গবেষক গবেষণা করতে পারবেন। প্রতিদিন ৫৬ হাজার মুসল্লির দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধাও থাকবে। প্রতিবছর ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কোরআন হিফজ করার সুবিধা ছাড়াও ১৬ হাজার ৮০০ শিশুর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসনের সুবিধাও থাকবে এসব কেন্দ্রে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের অধিকাংশ স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান সরকারের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে লাইব্রেরি, গবেষণা কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশুশিক্ষা কার্যক্রম, পুরুষ ও নারীদের পৃথক নামাজ কক্ষ, দেশি-বিদেশি মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা, মৃতদেহের গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইত্যাদি সুবিধা সংবলিত মডেল মসজিদ নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (উন্নয়ন) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাবে। এমএ/জেডএ/পিআর