প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আপনারা চিৎকার করলেই তো হবে না। আমাদের শুনানি করতে দিন। আপনারা যদি চেঁচামেচি করেন তা হলে শুনানি করবো কীভাবে?
Advertisement
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যার অভিযোগের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে একথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে হত্যা মামলায় আদেশের জন্য ২ জুন ঠিক করেন আদালত। একইসঙ্গে, নাশকতার অপর এক মামলার শুনানির জন্য আগামীকাল ধার্য করেন।
রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়ম মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
Advertisement
এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি চলাকালীন এক সময় আদালত মামলার কার্যক্রম ২ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেন। এক পর্যায়ে আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন পাশে বসা বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যান এবং কথা বলতে থাকেন। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এজে মোহাম্মদ আলীও দাঁড়িয়ে মামলা শুনানির জন্য বলতে থাকেন।
তারা বলতে থাকেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবি অনুযায়ী আপনারা মামলা মুলতবি করেছেন। এ সময় আদালত বলেন, আমাদের একজন ব্রাদার জাজ থাকতে পারবেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল না চাইলেও আমরা তো পারছি না। আমরা বলেছি, এই সোমবারের পরের সোমবার হবে।
এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা জামিন শুনানি করতে এসেছি। আমরা চাই অর্ডার। হয়তো খারিজ না হয় জামিন বহাল করুন।
এ সময় জয়নুল আবেদীন বলেন, মাননীয় আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি চলছে। তিনি অসুস্থ, বয়স্ক তার জামিন হওয়া দরকার। বাইরের রাজনীতি কোর্টে আনবেন না। এ সময় বিএনপির আরও তিনজন আইনজীবী কথা বলতে থাকেন। তারা হলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এমন সময় আদালত বলেন, আপনারা সবাই কথা বললে আমরা কার কথা শোনবো। আপনার চিৎিকার চেঁচামেচি না করে একজন করে বলুন।
Advertisement
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনার আগে দলীয় নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এর কথাও আদালতে তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসলি।
পরে খালেদা জিয়াকে এ ঘটনার ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে বর্ণনা করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘হরতাল ও অবরোধ এক বিষয় না। হরতাল ও অবরোধের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে, হরতালে সীমিতভাবে গাড়ি চলে, দোকানপাটও খোলা থাকে। আর অবরোধে গাড়ি চলতে দেয়া হয় না। সবকিছু অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তখন লাগাতার অবরোধ চলছিল। তাছাড়া অবরোধ সফল করার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়াই তখন প্রধান ব্যক্তি। টেলিফোনে কথপোকথনেই প্রমাণ হয়, খালেদা জিয়ার নির্দেশেই ওই ঘটনা ঘটেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এতবড় নৃসংশ ঘটনায় করা মামলার প্রধান ব্যক্তি হওয়ার পরও যদি তাকে জামিন দেয়া হয়, তবে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারগুলোর কছে কী বার্তা যাবে? ফলে আমার আরজি হল, হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করা হোক।’
এরপর প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে জানতে চান, এ বিষয়ে তার আরও কিছু বলার আছে কী-না। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আরেকটু আছে। আগামীকাল করতে চাচ্ছি।’
প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, ‘আগামীকাল (সোমবার) আমাদের একজন ব্রাদার জাজ থাকবেন না। দেশের বাইরে যাবেন। তাহলে আগামী সোমবার অর্থাৎ এই সোমবারের পরের সোমবার শুনব আমরা।”
এফএইচ/জেএইচ/পিআর