জাতীয়

ব্লাড ব্যাগ সংকটে রক্ত পরিসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত!

প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্লাড ব্যাগের তীব্র সংকটে দেশে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রক্ত সংগ্রহের জন্য বার্ষিক রক্তের ব্যাগের চাহিদা ৮ লাখ হলেও সরকারি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বছরে মাত্র ২ লাখ ব্লাড ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ইনস্টিটিউটের ব্লাড ব্যাগ শাখায় অটোমেটিক ব্লাড ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিনের সংখ্যা মাত্র একটি। তবে বার্ষিক ৮ লাখ ব্লাড ব্যাগ তৈরির প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল তাদের রয়েছে।  সরকারের কাছ থেকে মাত্র ১৬ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পেলে নতুন দুটি মেশিন কিনে তারা বার্ষিক চাহিদা পূরণ করতে পারবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ কম হওয়ার সুযোগে এক শ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের কাছে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে ব্লাড ব্যাগ বিক্রি করছেন।স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন ধরনের ব্লাড ব্যাগের উৎপাদন খরচ সিঙ্গেল ব্লাড ব্যাগ প্রতি পিস ৬২ টাকা এবং প্রতি পিস ডাবল ও ট্রিপল ব্লাড ব্যাগ ৯২ টাকা।বাজারের বিভিন্ন সার্জিক্যাল দোকান ঘুরে ও রক্ত সংগ্রহকারী রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে-  সিঙ্গেল ব্লাড ব্যাগ প্রতি পিস ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, ডাবল ব্লাড ব্যাগ প্রতি পিস ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা এবং ট্রিপল ব্লাড  ব্যাগ প্রতি পিস ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি পরিচালনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মহাসচিব ও বিএসএমএমইউ’র ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আসাদুল ইসলামব্লাড ব্যাগের সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দেশে এখনো স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা এমনিতেই কম। এমতাবস্থায় মুমূর্ষু কোন রোগীর জন্য স্বজনরা অনেক খোঁজাখোঁজির পর ডোনার নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন। অধিকাংশ সময় তারা জানতে পারেন ব্লাড ব্যাগের সরবরাহ শেষ হয়ে গেছে।তখন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বাইরে দোকান থেকে দ্রুত রক্তের ব্যাগ কিনে নিয়ে আসতে বলেন। রক্তের ব্যাগ কিনে আনা, রক্তের ক্রসম্যাচিং ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেরি হওয়ায় রোগীর চিকিৎসা শুরু হতেও অনেক সময় বিলম্ব হয়। ক্রসম্যাচিং ও রক্তের ব্যাগ কেনায় কমপক্ষে ৫শ’ টাকা খরচ হয়। ব্লাড ব্যাগ সংকটের বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে তারা আলাপ আলোচনা করছেন বলেও জানান তিনি।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফর উল্ল্যাহ বলেন, তাদের ব্লাড ব্যাগ ইউনিটে প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো রয়েছে। নতুন দুটি মেশিন পেলেই তার বার্ষিক ৮ লাখ ব্লাড ব্যাগ তৈরির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবেন। তিনি জানান, সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্লাড ব্যাগ সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে নতুন দুটি অটোমেটিক ব্লাড ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিন কেনার প্রস্তাব রেখেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নতুন মেশিন কেনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহনের নির্দেশ দেন। অধ্যাপক মো. আসাদুল ইসলাম জানান, জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচীতে উন্নতমানের ব্লাড ব্যাংক স্থাপনের জন্য অর্থবরাদ্দ রয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে মেশিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।এমইউ/এসএইচএস/এমআরআই

Advertisement