সাগরে ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমা তিথির প্রভাব কমে যাওয়ায় রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে বৃষ্টিপাত। ফলে সমতলে প্লাবিত ঢলের পানি নামতে শুরু করেছে। তবে উপকূলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা। একারণে দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা বাড়ি ফেরা তো দূরে থাক আশ্রয় কেন্দ্রেও থাকতে পারছে না। অনেক কাঁচা-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘরে ফেরার আশাও করতে পারছে না অনেকে। পেকুয়া উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, পেকুয়া সদর, টৈটং, শীলখালী ও সমুদ্র তীরবর্তী মগনামা, উজানটিয়া এবং রাজাখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় সমুদ্র উপকূলের ইউনিয়নগুলোতে জোয়ার ভাটা চলছে। কিছু মানুষ বাড়ির নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও অনেক হতদরিদ্র পরিবার উচু রাস্তায় পলিথিন দিয়ে আশ্রয়স্থল তৈরি করে আছে। পেকুয়া সদরের মুহাম্মদ ইউনূস ও মগনামা মুহুরী পাড়ার মুহাম্মদ আনাস জানান, চকরিয়া উপজেলা সীমান্তে পেকুয়ার যেসব ইউনিয়ন রয়েছে সেসব এলাকার সিংহভাগ ঘর-বাড়ি ২৫ জুলাই থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আর ৩১ জুলাইয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘কোমেন’ ও পূর্ণিমার তিথির প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কয়েক ফুট বেড়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ। ফলে একদিকে ঢলের পানি, অপরদিকে জোয়ারের পানি পুরো উপজেলাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। কোথাও কোনো কাজ কর্ম নেই। যারা শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের পরিবারে খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। আবার যাদের গোলাভর্তি ধান চাউল ছিল তারাও এসব কোনো কাজে লাগাতে পারছেন না। পানিতে ভিজে গিয়ে এসব খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শেফায়েত আজিজ রাজু বলেন, পেকুয়ার চারদিকে বেড়িবাঁধের ১০টি পয়েন্টে ভয়াবহ ভাঙনে লোকালয়ে এখন জোয়ার ভাটা চলছে। মাতামুহুরি নদীতে লামা ও আলীকদম থেকে নামা পাহাড়ি ঢলের ধাক্কায় বার্মার টেক, তেইল্যাকাটা, পুরুইত্যাখালী রাবার ড্যাম এলাকা, মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া, শরতঘোনা, উত্তর পাড়া ও উজানটিয়া ইউনিয়নের টেকপাড়ার বেড়িবাঁধ সর্ম্পূণ ভেঙে গেছে। উক্ত ভাঙা অংশ দিয়ে বার বার জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে বহু গ্রাম।তিনি আরো বলেন, দূর্গত লোকজন অনুসারে ত্রাণ অপ্রতুল। প্রশাসন যা দিচ্ছে তাতে দূর্গতদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু পেকুয়া নয়, জেলার রামু, চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কক্সবাজার সদরের লাখ লাখ মানুষ ত্রাণের বদলে ভাঙা বাঁধ দ্রুত মেরামত করে দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণের রাস্তা বের করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম বলেন, গত একমাসে টানা তিন দফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে গেছে রামুর ৫টি ইউনিয়ন। বন্যার পানি ও জোয়ারের ধাক্কায় ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে বার বার ক্ষতির মুখে পড়ছে সাধারণ মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের একটি বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি পেলে বেড়িবাঁধ নির্মাণে হাত দেয়া হবে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে উপজেলার আঠারো ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার সম্পূর্ণ ও ৩৪ হাজার ৪৫০টি কাঁচাঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানিতে ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের সড়ক-উপসড়ক। বন্যায় পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলার ৪০ হাজার একর চিংড়িজোনের প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্য প্রকল্প থেকে ভেসে গেছে দুইশত ৬৬ কোটি টাকার মাছ। একই ভাবে গত জুন মাসের বন্যায় উপজেলার চিংড়ি জোনে ১১৭ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। কক্সবাজার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও সদরে ৪০টি ইউনিয়ন বন্যা ও জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব লোকজনের জন্য ৫শ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে রামু, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন না থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও কম হতো। এখন কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পরিত্রাণ পাওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমএএস/এমআরআই
Advertisement