ঢাকার দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের পাশে স্থাপিত প্রায় ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিনের প্রায় অর্ধেক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত অধিকাংশ ডাস্টবিন ইতোমধ্যে চুরি অথবা নষ্ট হয়ে গেছে। সময়মতো বর্জ্য অপসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা গেছে ২০১৬ সালে রাজধানীর সড়কগুলোর পাশে প্রায় ১১ হাজার মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়। তন্মধ্যে ডিএসসিসি প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ আর ডিএনসিসি এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মিনি ডাস্টবিন ছিল। এ উদ্যোগটি নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকদের এক হিসাব থেকে জানা গেছে, এসব মিনি ডাস্টবিনের মধ্যে ৫১ শতাংশ এখনও টিকে আছে। বাকি ২৭ শতাংশ বিন এখন মেরামতযোগ্য, আর ২২ শতাংশ বিনের কোনও হদিস নেই।
অন্যদিকে উত্তর সিটিতে বসানো মিনি ডাস্টবিনের মধ্যে অনেকগুলো উধাও হয়ে গেছে। আবার ফুটপাতে থাকা এসব মিনি ডাস্টবিন নিয়মিত পরিষ্কার বা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
জানা গেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বসানো মিনি ডাস্টবিন লাগানো প্রকল্পে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে তারা আবারও নতুন করে মিনি ডাস্টবিন লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়া নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব ডাস্টবিন ব্যবহার উপযোগী করতে কাজ করবে সংস্থাগুলো।
এদিকে জনসচেতনার অভাবে তেমন একটা কাজে না আসা এই প্রকল্পে নতুন করে আবারও অর্থ খরচ করবে দুই সিটি কর্পোরেশন।
ডিএসসিসির প্রতিবেদনে ৫১ শতাংশ মিনি ডাস্টবিন অক্ষত বলা হলেও বাস্তবে তার মিল পাওয়া যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ ডাস্টিবিনই উধাও। তবে যেগুলো এখনও টিকে আছে সেগুলো চাপ খেয়ে নষ্ট হওয়া বা ভাঙাচোরা অবস্থায় আছে। এছাড়া যেগুলো ব্যবহারের উপযোগী আছে সেগুলোতে ঠিকমত ময়লা অপসারণ করা হয় না। রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, গুলিস্থান, আজিমপুর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এছাড়া একই অবস্থা ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুর, মোহাম্মাদপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেইট এবং উত্তরা এরাকায়ও।
Advertisement
এসব এলাকার মিনি ডাস্টবিনগুলোও হয় উধাও, না হয় ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় আছে। এরপরও জনসচেতনা সৃষ্টি না করে এবং নিয়মিত এসব মিনি ডাস্টবিনের আবর্জনা অপসারণের উদ্যোগ না নিয়ে আবারও নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মনিরুল ইসলাম নামে মতিঝিলের এক ব্যবসায়ী বলেন, শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে মিনি ডাস্টবিন বসানোর উদ্যোগ খুব ভাল ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি জনসচেতনতার অভাবে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। অনেকে চুরি করে নিয়ে গেছেন এগুলো। আবার সিটি কর্পোরেশনের গাফলতি আছে এখানে। কারণ যেসব বিন এখনও ভাল আছে সেগুলোর ময়লা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এ অবস্থায় নতুন করে আবারও মিনি ডাস্টবিন লাগানোর উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, আর অবশিষ্ট মিনি ডাস্টবিনগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
রাজধানীর ধানমন্ডির রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন নুরুল আমিন। মিনি ডাস্টবিনের রক্ষণাবেক্ষণের অব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ফুটপাত দখল করে যারা দোকান করেছে তারাই এসব ডাস্টবিন নষ্ট করেছে। কারণ এসব ডাস্টিবিন থাকায় দোকানের পাশে দুর্গন্ধ থাকে। ফলে তারা বিনগুলো নষ্ট করে দেন, যেন মানুষ ব্যবহার করতে না পারেন। এছাড়া অনেকগুলো চুরি হয়ে যায়, মাদকসেবীরা এসব চুরি করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। তাই নতুন করে মিনি ডাস্টবিন বসানোর আগে এ বিষয়গুলো তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত পরিষ্কার করে নগরবাসীকে এগুলো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আর তা না হলে নতুন করে আবার মিনি ডাস্টবিন বসানো হলে সে প্রকল্পও ব্যর্থ হবে।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই অনেক মিনি ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল। কিন্তু এগুলোর বেশিরভাগই এখন ব্যবহারের উপযোগী নেই। এগুলো বসানোর পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদারিক না থাকায় মানুষ আগ্রহ হারিয়েছে। এছাড়া অনেকগুলো চুরি বা ভেঙে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই নতুন করে আবার মিনি ডাস্টবিন বসিয়ে খরচ বাড়ানোর আগে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে।
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই অল্প দূরত্বের ব্যবধানে আবার নতুন করে বসানো হবে মিনি ডাস্টবিন। এছাড়া যে ৫১ শতাংশ বিন এখনও অক্ষত আছে সেগুলোও ঠিকঠাক করার পাশাপাশাশি অল্প মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় থাকা মিনি ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করে পুনরায় বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সড়কের পাশের এসব বিনের বাইরেও সম্প্রতি দাতা সংস্থার অর্থায়নে নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে বর্জ্য ফেলার জন্য বেশ কয়েকহাজার ঢাকনাযুক্ত বিন সরবরাহ করা হয়েছে।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নতুন করে মিনি ডাস্টবিন বসাবো। এছাডা় পুরাতন ও ভাঙাচোরা বিনগুলো মেরামত করে লাগানো হবে। সব মিলিয়ে কত বিন বসানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করব। কতগুলো বিন বসানো হবে তা কাজ শেষ হলেই সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।
এদিকে মিনি ডাস্টবিনের এমন বেহাল অবস্থার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক কমোডোর এম এ রাজ্জাক বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য মিনি ডাস্টিবিন নষ্ট হয়েছে। এছাড়া বিক্রয়যোগ্য হওয়ায় অনেকগুলো চুরি হয়েছে। এ জন্য নতুন কোনো পন্থায় ডাস্টবিন বসানোর বিষয় নিয়ে কাজ চলছে।
জনসচেতনা সৃষ্টিতে ব্যর্থ এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্ন না করা বা তদারকির অভাবেই এই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মিনি ডাস্টবিনে সফলতা নেই এটা বলা যাবে না। যেসব বিন নষ্ট বা চুরি হয়েছে, সেগুলো মেরামতের পাশাপাশি নতুন করে বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এগুলো ব্যবহারে নগরবাসীর মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং, পোস্টারিংসহ বেশ কিছু উদ্যোগও নেয়া হয়। তাই নগরবাসী কার্যত সচেতন হলেই এর ব্যবহার বাড়বে। পাশাপাশি পুনরায় মিনি ডাস্টবিনগুলো লাগানো এবং সংস্কার হলে পরিচ্ছন্ন থাকবে নগরী।
এএস/এমএমজেড/এমএস