আইন-আদালত

কুমিল্লার ঘটনায় ‘সরকারের এজেন্সি জড়িত’

২০১৫ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

Advertisement

রোববার এই মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

খন্দকার মাহবুব বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে সরকারের একটি এজেন্সি জড়িত। হরতাল অবরোধ চলার সময় বিরোধীদলকে নস্যাৎ করতে এবং জনগণ ও দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য সরকারের এজেন্টরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

আরও পড়ুন : কুমিল্লার এক মামলায় খালেদার জামিনের বিষয়ে আদেশ ২ জুলাই

Advertisement

হিটলারি কায়দায় সরকার প্রেট্রোল বোমা মেরেছে বলেও মন্তব্য করেন খন্দকার মাহবুব হোমেন।

বেগম জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে বিরোধীদলের ওপর দোষ চাপিয়ে জনগনকে বিভ্রান্তি করতে এরকম করেছে সরকার। আমরা দেখিয়ে দেবো যে, কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব বলেন, এ মামলায় আপনারা জানেন এফআইআর-এ ৫৬ জনের নাম ছিল। সেখানে খালেদা জিয়ার নাম ছিল না। পরবর্তী পর্যায়ে দ্বিতীয়বারের অভিযোগপত্রে তার নাম ঢুকানো হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর আমরা হাইকোর্ট থেকে খালেদা জিয়ার জামিন নিয়েছি। সরকার আপিল করে। আজকে অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে মামলার শুনানি শুরু হয়। ৩০২ ধারায় (হত্যার অভিযোগে) দায়ের করা মামলার ওপর শুনানি করা হয়েছে। আগামী ২ জুলাই রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

আরও পড়ুন : ইউনাইটেড ছাড়া কোথাও চিকিৎসা নেবেন না খালেদা

Advertisement

তিনি জানান, শুনানির সময় আদালত বলেছেন একজন মাননীয় বিচারক থাকবেন না। আমরা লজ্জিত, আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা বললাম এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল ইচ্ছাকৃতভাবে বেইলের (জামিন) ব্যাপারে দেরি করছেন।

খালেদার এই আইনজীবী বলেন, আমরা বার বার কোর্টকে বলেছিলাম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, বৃদ্ধা মহিলা, বয়ষ্ক মহিলা, মানবিক কারণে বেইল অ্যাপলিকেশন (জামিন আবেদন) করেছি। কিন্তু বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো অজ্ঞাত কারণে মামলাটি দীর্ঘায়িত করছেন।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আইকন পরিবহনের একটি বাসের কয়েকজন যাত্রীর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। আহত হন আরও ২০ জন। ওই ঘটনায় দু’টি মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন : বিএসএমএমইউতে যাবেন না খালেদা জিয়া

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার এ দুই মামলায় গত ২৮ মে খালেদা জিয়ার ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পরদিন ২৯ মে জামিন স্থগিত করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে, জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের শুনানির জন্য নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ৩১ মে নির্ধারিত দিনে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন জামিন স্থগিত করা হয় এবং মামলাটি শুনানির জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করা হয়।

দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেই থেকে তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ওই মামলায় আপিলের পর খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। যেটি গত ১৭ মে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

আরও পড়ুন : ইউনাইটেডে খালেদার চিকিৎসা চেয়ে স্বরাষ্ট্রে আবেদন

তবে খালেদা জিয়াকে অন্তত আরও ছয়টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, কারামুক্তির জন্য সেগুলোতে তাকে জামিন পেতে হবে। এ মামলাগুলোর মধ্যে কুমিল্লায় তিনটি ও নড়াইলে একটি এবং বাকিগুলো ঢাকার। এসব মামলার মধ্যে কুমিল্লার এই দুটি মামলাও রয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার ব্যক্তিগত চার চিকিৎসক। সাক্ষাৎ শেষে কারা ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়া ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছিলেন।

তবে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, খুব সম্ভবত তিনি (খালেদা জিয়া) রোজা রেখেছিলেন। রোজা রাখার পর বিকেল ৩টা সাড়ে ৩টার দিতে হেলে পড়ে যাচ্ছিলেন। তখন তার যে একটা লোক আছে ফাতেমা.. সে তাকে ধরে ফেলে এবং তাৎক্ষণিক জেলের ডাক্তাররা তাকে দেখেন। দেখার পর...তিনি যেহেতু রোজা রেখেছিলেন তার সুগার লেভেল কমে গিয়েছিল বলে তারা জানান। একটা চকলেট খাওয়ার পর তা রিভাইভ করে।’

আরও পড়ুন : ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ করেছিলেন খালেদা, ধারণা চিকিৎসকের

খালেদা জিয়া অসুস্থ দাবি করে বিএনপি নেতারা আগে থেকেই তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) বা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিতে হবে তাকে।

তবে এ দুই হাসপাতালে কোথাও চিকিৎসা নিতে রাজি নন বিএনপির সর্বোচ্চ এ নেতা।

এফএইচ/এনএফ/এমএস