প্রবাস

কর্মী নিয়োগে আগের পদ্ধতিতে ফিরে যাচ্ছে মালয়েশিয়া

 

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় আসেন দেশটির আধুনিকায়নের জনক মাহাথির মোহাম্মদ। শেষ বয়সে আবারও ক্ষমতায় এসে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। সাবেক নাজিব রাজাক সরকারের দুর্নীতির বিচারসহ সবক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাবমুক্তির কাজে মনোযোগ দিয়েছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন মাহাথির মোহাম্মদ।

Advertisement

দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগের পদ্ধতিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত আবেদন প্রক্রিয়া সরাসরি মালয়েশিয়ান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেছে সে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম কালুসেগারান। শুক্রবার মালয়েশীয় পত্রিকা দ্য স্টার’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্ত্রী বলেছেন, চলমান প্রক্রিয়াকে স্থগিত ঘোষণা করছি এবং আবার পুরনো প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ চলবে। যা সরকার এই প্রক্রিয়ার ব্যবস্থাপনায় থাকবে।’

‘অভিবাসী কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ উঠায় তা নিয়ে পূর্ণ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে’ যোগ করেন তিনি।

Advertisement

তবে মালয়েশিয়ার সরকার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানায়নি বলে নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।

২০১২ সালে দুই দেশ শুধুমাত্র সরকারি মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে একটি চুক্তি সই করে। ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর সেটিকে পরিমার্জন করে ১০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নাজিব রাজাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসন নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের উপকারের লক্ষ্যে এবং ব্যবসা হিসেবে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছিল।

এ প্রক্রিয়াটিকে 'জগাখিচুড়ি' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ও দুর্নীতির কারণে অভিবাসী কর্মীদের মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কিছু লোককে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হতো। ১০টি কোম্পানির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এবং এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

তদন্ত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি। আশা করি খুব দ্রুত এ সমস্যার প্রকৃত কারণ খুঁজে পেয়ে সমাধান সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সিলর মো. সাইয়েদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দূতাবাসকে বিষয়টি জানানো হয়নি। আমরা প্রতিবেদনটি দেখেছি, কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পেলে বিস্তারিত বলতে পারবো।’ সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, ‘এক্ষেত্রে এককভাবে কোনও কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ, এটি একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং এর যেকোনও সমস্যা দুই পক্ষকে বসে ঠিক করতে হবে।’

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি তারা আসছে।’দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় নতুন সরকার গঠিত হয়েছে এবং এটি স্বাভাবিক তারা আগের নিয়মগুলো বুঝবে, জানতে চাইবে এবং গোটা বিষয়টি নিজেদের মতো করে সাজাতে চাইবে।’

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মাদ বাংলাদেশের একজন বন্ধু এবং তার আগের মেয়াদে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের আশ্রয় এবং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার।

এর আগে মালয়েশিয়ান পত্রিকা দ্য স্টার এর অনুসন্ধানে এই সিন্ডিকেটের তথ্য জানানো হয়। তাতে বলা হয়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মানবপাচারচক্র মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কাজ দিয়ে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ২০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

দ্য স্টার-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে স্থানীয় এজেন্টকে ২০ হাজার করে মালয়েশীয় রিঙ্গিত দিচ্ছে শ্রমিকরা। স্থানীয় এজেন্টরা এর মধ্যে অর্ধেক অর্থ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার রিঙ্গিত দিচ্ছে সরকারিভাবে নিবন্ধিত এজেন্টদের হাতে।

সূত্রমতে একজন শ্রমিক পাঠানোর নথিভুক্তি ও পরিবহনে খরচ হয় ২ হাজার রিঙ্গিতের চেয়েও কম। ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি শ্রমিক মালয়েশিয়া গিয়েছেন কাজের জন্য। এছাড়া আরও লক্ষাধিক শ্রমিক দেশটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এসব দেশ থেকে একই ধরনের শ্রমিক পাঠাতে ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়।

এমআরএম/পিআর