কাজের চাপ সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় জাপানের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি কর্মীর মাথায় তাদের বসকে খুন করে ফেলার চিন্তা আসে। সম্প্রতি চালানো এক জরিপ থেকে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
Advertisement
জরিপে অংশ নিয়ে ২০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী যে ১০০৬ জন কোনো না কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশের মাথায় জীবনে কখনও না কখনও এমন চিন্তা এসেছে। বিভিন্ন জাপানি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারাীদের মাঝেই যে এমন ক্ষোভ লুকিয়ে আছে তা বেরিয়ে এসেছে এই জরিপে অংশ নেয়া তরুণদের কথায়।
টোকিওর একজন অনুবাদক মায়াও শিবাতা বলছেন, আমি কখনও কাউকে হত্যা করতে পারব না, কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কর্মীদের সঙ্গে যেমন আচরণ করে তাতে আমি বুঝতে পারছি যে তারা কেন এমন চিন্তা করতে পারছে।
তিনি আরও বলেন, আমি একসময় টোকিওতে ছোট একটা রেস্তোরাঁতে পার্ট-টাইম কাজ করতাম। ওখানকার ম্যানেজারের বয়স ছিল ৩০-এর মতো, আর সে নিজেই ছিল হতাশ এক মানুষ। আমি যেহেতু একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতাম তাই তার কিছুতেই আমাকে পছন্দ হচ্ছিল না। ও আমার জীবনটাই তছনছ করে দিয়েছিল.. আমি যা কিছু করতাম তার কিছুই ভালো হতো না।
Advertisement
শিবাতা বলেন, ও যদি কোনো ছেলের সাথে এমন আচরণ করত, তাহলে মারামারি লেগে যেত।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয় এই সমস্যার মূলে রয়েছে জাপানি কোম্পানি ও সমাজে জ্যেষ্ঠদের অতিসম্মান করার প্রবণতা। কারণ, এখানে যোগ্যতার চেয়ে বয়সকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এখানে ভালো কোনো উদ্যোগ নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে তরুণদের জন্য উঠে আসাটা কঠিন। কিন্তু অকারণেই বয়োজ্যেষ্ঠ কাউকে অনেক সম্মান দেয়া হবে।
বিষয়টা স্বীকার করে নিয়েছেন জাপানের হোকাইদো বানকিউয়ো ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মাকোতো ওয়াতানাবে।
তিনি বলছেন, প্রচুর বয়স্ক মানুষ রয়েছে যারা অবসরে যেতে চায় না, কারণ তাদের পরিচয়, গোটা জীবনটাই এই এক চাকরি নিয়ে। তারা জানে চাকরি না থাকলে তাদের আর কোনো পরিচয় থাকবে না। তাই তারা কনিষ্ঠদের পথরোধ করে।
Advertisement
মাকোতোর মতে এ ছাড়া জাপানকে বহু ‘ব্ল্যাক কোম্পানি’র উত্থানের সাক্ষী হতে হয়েছে; যে প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন কাঠামো ভালো নয়, যা বীমার আওতায় আসতে পারেনি, যেখানে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরেও কর্মীদের থাকতে বাধ্য করা হয়। আর চাকরি ছেড়ে দিলে তো বেতন না দেয়ার চল রয়েছেই, তবে তারপরও এমন বহু তরুণ রয়েছে, যার কিছুটা দক্ষ এবং যারা এখনও চাকরির খোঁজে রয়েছে।
তিনি বলেন, এদের আসলেও নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের বেতন সন্তোষজনক নয়, খারাপ পরিবেশে তাদের কাজ করতে হয়, তাদের বসের আচরণ ভালো নয়। সবমিলিয়ে এটাই বিস্ময়কর যে মাত্র ২৭ শতাংশ কর্মী তার বসকে খুন করার চিন্তা করেছে।
গেল মার্চে পুলিশ ২১ বছর বয়সী এক তরুণকে গ্রেফতার করেছিল, যিনি একটি আসবাবপত্রের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। ওই তরুণের বিরুদ্ধের অভিযোগ ছিল তিনি যেখানে কাজ করতেই ওই ভবনে তিনি নিজেই আগুন জ্বালিয়ে দেন। ওই অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহত না হলেও দমকল বাহিনীকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩১ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
ওই ঘটনা নিয়ে ফুজি টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাতোরু সুনাগা নামে ওই তরুণ পরে আগুন লাগানো কথা স্বীকার করেন এবং বলেন ক্লান্তি থেকে মুক্তি চেয়েই ওই কাজ করেছিলেন তিনি।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।
এনএফ/এমএস